দেশে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৭ শতাংশ : ১ বছরে ক্ষতি ১৮ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০:০৯ অপরাহ্ন
বেশী দুর্ঘটনা ঢাকায়, কম সিলেটে
জালালাবাদ রিপোর্ট : ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নিহতের সংখ্যা ২২ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এক বছরে সারা দেশে দুর্ঘটনার এমন চিত্র উঠে এসেছে। শনিবার রাজধানীতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের দাবি, ২০২২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ১৮ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। সংস্থাটি বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা তার চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি। এই বিবেচনায় এবছর সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জিডিপি’র ১.৫ শতাংশের বেশি হতে পারে।
গত বছরের দুর্ঘটনার যে চিত্র তুলে ধরা হয় তাতে দেখা যায়, দেশে ৬ হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৬১৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ১ হাজার ৬১ এবং শিশু ১ হাজার ১৪৩ জন।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে ঃ ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে (১৮৪১ টি দুর্ঘটনায় নিহত ২০৪৪ জন)। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে (৩১৩ টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৫ জন)।
রাজধানীতে ২০২২ সালে তার আগের বছরের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। যানবাহনের ধাক্কায় বা চাপায় পথচারীরা বেশি হতাহত হয়েছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে রাতে ও ভোরে।
সংস্থাটি বলছে, গত চার বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাদে অন্যান্য দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু ক্রমাগত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় বছর বছর তালিকা বড় হচ্ছে। গত বছর সড়কে নিহতদের ৪০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছর।
আঞ্চলিক সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল চালকদের বড় অংশ কিশোর ও যুবক, যাঁদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা বেশি। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে তাঁদের ধারণাও কম। এছাড়া জাতীয় সড়কে দ্রুত গতির যানের বেপরোয়া চলাচলের শিকারও হচ্ছে মোটরসাইকেল।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর মতে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ: ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর সুপারিশসমূহ: ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে; ১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে, সড়কের পাশাপাশি গত এক বছরে ১৯৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩১৯ জন নিহত এবং ৩৫৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৬ জন নিহত হয়েছেন।