প্রবাসী ব্লগারদের নিয়ে কী করবে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:২৭:৪৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: বিদেশে বসে যারা ব্লগিং করেন তারা দিন দিন দেশে জনপ্রিয়তা পচ্ছেন। মূলত সরকার বিরোধী মতামত এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে দুর্নীতির খবর সামনে নিয়ে আসায় তাদের ব্লগের ভিউ হু হু করে বাড়ছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের নানান অভিযোগ অনেকদিন থেকেই। এতে সরকারের জনপ্রিয়তাও কমছে বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সরকার থেকে বলা হলেও এ ক্ষেত্রে তা এতো সহজ নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কূটনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ ওইসব দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ইস্যুগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে সরকার চাইলেও ওইসব দেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইবে না।
বিদেশে বসে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে বসবাসকারী কিছু বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বক্তব্য দেন নিয়মিত। এসব ব্যক্তি বাংলাদেশে থাকাকালে সাংবাদিকতা, চিকিৎসাসহ নানা পেশায় যুক্ত ছিলেন।
ফ্রান্স প্রবাসী একজন ইউটিউবারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে চেয়েছে বিভিন্ন সময়। জাতিসংঘে সাংবাদিকদের উদ্দেশে করা নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক বাংলাদেশি সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও বাতিল করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাতে পারে আমাদের মিশনগুলো। সেই অনুযায়ী সেই দেশগুলো চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এখানে সরকারের সরাসরি কিছু করার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আতিকুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা মূলত বিশ্বের কয়েকটি দেশে বসবাস করছেন। এসব দেশে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ নয়। মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়গুলোকে তারা অনেক গুরুত্ব দেয়। ফলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও সেভাবে সাড়া পাওয়া সহজ হবে না।
এরআগে গত ১ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, অপপ্রচার হলে ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
এ ছাড়া বিদেশে বসে যারা অপপ্রচার করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটিও করা হয়েছে। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ২৫ শীর্ষ কর্মকর্তা আছেন বলে জানা যায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, কোনো অপপ্রচার হলে আপনারা ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। নিজেরাই জবাব দিন। রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। কেউ মিথ্যাচার করলে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিন। মন্ত্রণালয় থেকে হুকুমের অপোয় থাকবেন না।
এতদিন যেটা হয়েছে অনেক দূতাবাস এগুলো জানানও না। এমন অনেক হয়েছে যে ঢাকা থেকেই তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে ওখানে অপপ্রচার হচ্ছে। তারপর তারা নড়েচড়ে বসেন।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন রাষ্ট্রদূতদের আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে খারাপ কিছু হলে আপনারা আমাদের জানাতে চান না। খারাপ কিছুও হতে পারে। আপনারা জানান। কারণ আমরা সবাই মিলে একটা টিম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের বছর তাই এমন একটা টেকনিক্যাল কমিটি করা হলো। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এটা নির্বাচনের বছরকে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি। নির্বাচনের বড়জোর এক-দুই মাস আগে এ ধরনের কাজ করা হয় অনেক দেশে। আমরা সেই কাজ এক বছর আগে করে ফেলব?
অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণ এতো বোকা না। তারা বকবক করার করুক। ১০ ডিসেম্বর নিয়েও কিছু পাগল বলেছিল সরকার পড়ে যাবে। কিন্তু সেইসব পাগলের কথা কেউ বিশ্বাস করেনি।