বিএনপির গণ-অবস্থান লোকারণ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০০:০৩ অপরাহ্ন
১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশের যুগপৎ কর্মসূচি
আ’লীগের ‘সতর্ক পাহারা’ কর্মসূচীর নামে সমাবেশ
জালালাবাদ রিপোর্ট : বাধা, হামলা, আটক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সারাদেশে পালিত হলো বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচী। গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মী ও মানুষের ঢল ছিলো সিলেটসহ প্রতিটি বিভাগে। লোকারণ্য ছিলো রাজধানীর নয়াপল্টন ও আশেপাশের এলাকা। একই সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘সতর্ক পাহারা’ কর্মসূচী নাম দিয়ে সমাবেশ করেছে আওয়ামীলীগ।
তবে বিভাগীয় নগরী ফরিদপুরে বিএনপির কর্মসূচিতে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ। হামলায় বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। হামলায় বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে আরও কয়েকটি ছোট ছোট দল ও জোট ঢাকার কয়েকটি এলাকায় গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সেসব গণ-অবস্থান কর্মসূচীতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নিয়েছেন। গণ-অবস্থান না করলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পালন করেছে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’।
গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে সিলেটের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা মাঠে আসতে শুরু করেন। সকাল থেকে সরেজমিন দেখা যায়, কর্মসূচি ঘিরে রেজিস্টারি মাঠের পাশে সুরমা মোড়ে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। এছাড়া নগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টাসহ বেশ কয়েকটি মোড়েও পুলিশি টহল চোখে পড়ে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, বুধবার কেন্দ্রীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঢাকার নয়াপল্টনে শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। তবে ভোর থেকেই বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর নয়াপল্টন সড়কে অবস্থান নেন। বিভিন্ন ব্যানারে মিছিল নিয়ে এসে তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশেপাশের সড়কে জড়ো হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে নেতাকর্মীদের ঢল বাড়ে। এতে ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইন্টিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশেপাশের সড়কেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
গণ-সমাবেশ থেকে আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
এর আগে বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। জনগন জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ তার রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এ সরকার পুলিশ, আমলাদের ওপর ভর করেছে। তিনি বলেন, দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে। সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটি করতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর এই নয়াপল্টনে মকবুলের লাশ পড়ে ছিল। সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে শত শত কর্মী আহত হন। বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের ছয় শতাধিক কর্মীকে অমানবিকভাবে রাখা হয়েছে।
বিএনপি গতকাল ঢাকাসহ ১০টি বিভাগীয় শহরে (সাংগঠনিক বিভাগ) গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। কালকের গণ-অবস্থান ছিল তাদের দ্বিতীয় যুগপৎ কর্মসূচি।
এদিকে, বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ‘সতর্ক পাহারা’ নাম দিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামীলীগ এবং এর বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগ, মীরপুর শাহ আলী মাজারের পাশে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, শাহবাগে ছাত্রলীগ, শহীদ মিনারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ, আর ফার্মগেইটে মহানগর উত্তর যুবলীগ নেতাকর্মীরা সমাবেশ করেন।
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কদিন ধরেই বলা হচ্ছে, বিএনপি ‘গণঅবস্থানের নামে সহিংসতা প্রতিরোধে’ এই ‘সতর্ক পাহারা ও সমাবেশ’। মহানগর আওয়ামীলীগের যে নেতারা সমাবেশে বক্তৃতা করছেন, তাদের বক্তব্যের লক্ষ্যবস্তুও বিএনপি। যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে ‘ঠেকাতে চান’ বলে তারা বক্তব্য দেন।