অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজুড়ে দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১০:২৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : খোঁড়াখুঁড়ির ধুম চলছে সিলেট নগরজুড়ে। সড়কের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই গর্ত আর ইট-সুরকির স্তূপ। বন্দরবাজার থেকে শুরু করে সুরমা পয়েন্ট, কিনব্রিজের মোড়সহ নগরীর অধিকাংশ স্থানে চলছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এ কর্মযজ্ঞ। এতে অতিষ্ঠ নগরজীবন। চলার উপায় নেই সড়কে। অপরিকল্পিত এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পুরো সিলেট শহর এখন যানজটের নগরী। বেড়েছে দুর্ভোগ। প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। একসাথে রাস্তা, কালভার্ট ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে এর মধ্যে পানির পাইপলাইনের জন্য নতুন করে খোঁড়াখুঁড়িতে সব রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরের উন্নয়নের জন্যই এসব খোঁড়াখুঁড়ি। উন্নয়নের স্বার্থে এ দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে কাজ হচ্ছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি তারা আমলে নিচ্ছে না।
নগর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরবাজার থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামন হয়ে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত সিসিকের পানি সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য চলছে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। অপরদিকে আগে থেকে চলছে কাজিরবাজার, শেখঘাট, নাইওরপুল, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, সুবিদবাজার, পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনের নির্মাণ কাজ। একই সাথে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলছে ছড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা। সব মিলিয়ে রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা থেকে শুরু করে ইট বালু ও ধুলোবালির স্তুপ। নগরীর সড়ক সম্প্রসারণ, ড্রেন-নালা নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় কয়েক মাস আগে। কিছু এলাকায় কাজ শেষ হলেও সম্প্রতি খোঁড়াখুঁড়ির মাত্রা আরও বেড়েছে। যে হারে দ্রুত খোঁড়াখুঁড়ি হয় সেইভাবে দ্রুত মেরামত না হওয়ায় দুর্ভোগের সময় র্দীঘায়িত হচ্ছে। নগরবাসীর দাবী উন্নয়ন কাজের অজুহাতে একসাথে সব রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি সিসিকের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের বহিপ্রকাশ। অথচ জনদুর্ভোগের বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল সিসিকের।
জানা গেছে, গত ২/৩ দিন থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন পানি সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। একসাথে নগরের বেশ কিছু সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। এতে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এবং ধুলাবালুতে সড়ক ঢেকে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। সম্প্রতি সিলেট নগরীর নাইওরপুল পয়েন্ট থেকে জিতু মিয়ার পয়েন্ট পর্যন্ত নতুন করে পানির লাইন বসানোর কাজ চলছে। এজন্য চলছে রাস্তার পাশ দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি। সড়কের পাশ থেকে খুঁড়ে তোলা মাঠি ফেলে রাখা হচ্ছে রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। ফলে ব্যস্ততম এ সড়কগুলোতে দিনরাত লেগে থাকে যানজট। এই সড়কে সৃষ্ট যানজটের প্রভাব পড়ছে পুরো নগরজুড়ে। এতে গাড়িচালক ও যাত্রী সাধারণকে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
এদিকে বিনা নোটিশে রাস্তা গর্ত করার কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন শহর ও শহরের বাইরে থেকে যানবাহন নিয়ে আসা লোকজন। বিকল্প পথে চলতে গিয়েও লোকজনকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কারণ সবগুলো সড়কের কোথাও না কোথাও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ড্রেন বা গর্ত করে মাটি তুলে রাখা হয়েছে রাস্তায়। এতে করে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা এসব রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা। এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়তে দেখা গেছে কোনো কোনো স্থানে।
পর্যটনের শহর সিলেটে পর্যটকদের বেড়াতে এসে এমন খোঁড়াখুঁড়ির বিপাকে পড়তে হচ্ছে সহসাই। অপরদিকে মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে পৃথক করা জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের দুই পাশে রাস্তায় বসেছে হকার। এতে করে ফুটপাত দিয়েও চলাচল ব্যাহত হচ্ছে পথচারীর। এমন অবস্থা বন্দরবাজার-তালতলা সড়ক। এখানেও দুই পাশে এখন হকারদের জমজমাট হাট। চলমান খোঁড়াখুঁড়িতে যানবাহন এবং মানুষ চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলেও হকাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
সিসিকে সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮ কোটি লিটার। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি লিটার সরবরাহ করা হয় পানির এসব পাইপলাইন দিয়ে। ৪০-৫০ বছর আগে পানির পাইপলাইন বসানো হয়েছিল। ওই পাইপলাইনগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। পুরোনো পাইপলাইনগুলোর বেশ কিছু স্থানে ছিদ্র হয়ে পানি বের হয়। এতে অপচয় হচ্ছে পানির। পাশাপাশি পানিতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছিদ্র হওয়া পাইপলাইন মেরামত এবং সড়ক সংস্কারে সিটি করপোরেশনের অর্থ খরচ হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দরবাজার এলাকার সিলেট হাসান মার্কেট থেকে শুরু করে কাজির বাজার, সুরমা মোড়, জেল রোড, চৌহাট্টাসহ কিছু এলাকায় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সব পাইপলাইন মেরামত করার কিছু দিনের মধ্যে আবার ছিদ্র তৈরি হচ্ছে। এ জন্য ওইসব এলাকার পাইপলাইনগুলো সরিয়ে নতুন করে পানি সরবরাহে প্লাস্টিকের পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে।
সিসিক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কিছু এলাকায় নতুন পানির পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সড়ক কাটা হয়। আবার পাইপলাইন সংযোগ নেওয়ার পর নতুন করে আবার লাইনে ছিদ্র হয়ে পানি অপচয় হচ্ছে। সে সময় সড়কের ওপর পানি জমে থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সিলেটে পানি কিংবা ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের জন্য পৃথক জায়গা নেই। তাই রাস্তার উপর দিয়েই এসব লাইন বয়ে গেছে। ফলে কোন সমস্যা হলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিকল্প নেই। তবে সিসিকের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার এলাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে প্লাস্টিকের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। মাটি খুঁড়ে সড়কের পাশেই রাখা হচ্ছে। মাটিগুলো চলাচলের সড়কে রাখায় পথ সরু হয়ে যাচ্ছে। বালুমাটিতে যানবাহনের চাকা পড়ে সেগুলো বাতাসে উড়ছে। এতে যানজটসহ নানা দুর্ভোগ এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এই অবস্থা আগামী ১০-১৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পুরোনো পানির পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মাঝে মাঝে পানি সড়কে উপচে পড়ে। এতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব পাইপলাইনগুলো মেরামত করলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার সমস্যা দেখা দেয়। তাই বর্তমানে নাইওরপুল থেকে জিতু মিয়ার পয়েন্ট পর্যন্ত নতুন করে পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পুরো শহর জুড়ে এই কাজ চলবে। এমনকি পাড়া মহল্লায়ও নতুন পানির পাইপলাইন স্থাপন হবে। এতে পানির অপচয় রোধ হবে এবং বার বার মেরামতের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবেনা।
তিনি বলেন, খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ বাড়ে ঠিক আছে। এরপরও একটি সুবিধা পেতে হলে কিছুটা কষ্ট স্বীকার করতে হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলে দিয়েছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য। এতে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে।