ফলের বাজারে ডলারের তেজ, আমদানি-বিক্রি দুটোই কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:১৬:০৭ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল: ফলের দাম ক্রমশ সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিত্য পণ্যের বাইরে মৌসুমি ও নানান সুস্বাদু ফলের প্রতি সবার আগ্রহ বরাবর। তাছাড়া শিশু ও রোগীদের জন্য বেশিরভাগ মানুষ ফল কিনে থাকেন। আগে দুই একটি ফলের দাম বেশি থাকলেও এখন প্রায় সবগুলো ফলের দামেই উর্ধ্বগতি। ফলে অনেকেই ফল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ফলের বাড়তি দামের পাশাপাশি কমেছেন আমদানিও। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে খেজুর এবং ড্রাগন ফলের। সবচেয়ে কম পেয়ারার দাম। আগের দামের চেয়ে কমেছে শুধু কালো আঙুরের। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফলের দোকান ও ফেরিওয়ালাদের সাথে কথা বলে বাজারের এই চিত্র দেখা গেছে।
ফল বিক্রেতারা বলছেন, বেশিরভাগ ফলই আমদানি নির্ভর। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন ভাড়া বাড়ার কারণে আমদানি করা ফলের দাম বাড়ছেই। তারা বলেন, দেশে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় গত বছরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল এনবিআর। পরে ফল আমদানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে আমদানিকারকদের নগদ টাকায় ফল আমদানি করতে হচ্ছে। এতে কমেছে আমদানি, কমেছে বিক্রিও।
এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার আগে থেকেই চড়া। এতে মানুষকে হিসাব করে খরচ করতে হচ্ছে। এর প্রভাব এসে পড়েছে ফলের বাজারেও। মানুষ দাম শুনে ফল না কিনেই চলে যাচ্ছেন। দাম বাড়ার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে, ফলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যারা রোগী বা বাচ্চাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে কেনেন, তারাও অল্প পরিমাণে কিনছেন।
ফল কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক আবু নোমান বলেন, বাজারে ফলের দাম খুব চড়া। বাসায় বাচ্চা এবং বৃদ্ধা বাবা মায়ের জন্য ফল কিনতে হয়। আগে মৌসুমী ফলের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফল কিনতাম। আত্মীয় স্বজন এলে তাদের শুরুতে ফল দিয়ে আপ্যায়ন করানো হতো। কিন্তু এখন সীমিত আয়ে ফলের দামের সাথে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। অল্প করে কয়েকটি ফল কিনে নিয়ে যাই। আত্মীয় স্বজনদের এখন চা-বিস্কুট দিয়েই সৌজন্যতা সারতে হয়। খারাপ লাগে কিন্তু কিছু করার নেই। সবদিকে খরচ বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে কমলা এখন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১শ ৮০ থেকে ২শ ২০ টাকা যা আগে ছিল ১শ ৬০ টাকা, আঙুর সাদা ২শ ৮০ টাকা, লাল আঙুর ৪শ ৫০ টাকা এবং কালো আগে ছিল ৫শ ৫০ টাকা এখন দাম ১শ কমে বিক্রি হচ্ছে ৪শ ৫০ টাকা, মাল্টা ২শ ৬০ টাকা, ড্রাগন ফল আগে ছিল ৪শ টাকা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ ৩০, ডালিম ৩শ ২০ থেকে ৪শ, আপেল ২শ ৮০ থেকে ৩শ টাকা।
খেজুরের মধ্যে নরমাল খেজুরে ৩০ টাকা এবং দামি খেজুরে ১শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন খেজুর প্রকার ও মান ভেদে ১শ ৩০ থেকে ৮শ ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে আজওয়া ৬শ টাকা, মরিয়ম ৮শ ৫০ টাকা এবং কলমি ৬শ টাকা। পেয়ারা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মিষ্টি বরই ১শ টাকা।
নগরীর বন্দর বাজারে ফলের দোকান হোসাইন ফ্রুটস এর কর্ণধার মো. মকন জানান প্রায় সবধরনের ফলে দাম বেড়েছে। এতে বিক্রি কমেছে। কমেছে চাহিদাও। আগে এই সময় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার ফল তাদের বিক্রি হয়েছে কিন্তু এখন তা অনেক কমে গিয়েছে। ডলারের দামের কারণে দাম বেড়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ফলে কেনার চাহিদা কমেছে তাই ক্রেতার সংখ্যাও কমেছে।