জালালাবাদে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত: পাখি শিকার করে ভাগবাটোয়ারা, সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় বনপ্রহরী প্রত্যাহার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৬:৪৭:১৭ অপরাহ্ন
বড়লেখা প্রতিনিধি : হাকালুকি হাওরে বিষটোপ দিয়ে হাঁস পাখি (অতিথি) শিকার করে ভাগবাটোয়ারার ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি। ঘটনায় হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবারের দৈনিক জালালাবাদের শেষ পৃষ্ঠায় ‘হাকালুকি হাওরে শিকারির কবল থেকে উদ্ধার অতিথি পাখি ভাগ করে নিলেন প্রভাবশালীরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিওএফ) রেজাউল করিম চৌধুরী ওই দিনই এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, সংবাদ প্রকাশের দিনই সরেজমিনে তারা ঘটনা তদন্ত করেন। হাকালুকি হাওরে পাখি শিকার করে ভাগবাটোয়ারার ঘটনাটি তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের সংশ্লিষ্টতাও মিলেছে। শীঘ্রই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলাধীন একটি বিল থেকে তালিমপুর ইউপির মুর্শিবাদকুরা গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে হুসেন আহমদ (২০) বিষটোপ দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক হাঁস পাখি শিকার করেন। শনিবার সকালে তিনি পাখিগুলো বিক্রির জন্য বস্তায় ভরে স্থানীয় কানুনগোবাজারে নিয়ে যান। খবর পেয়ে হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন পাখিসহ হুসেনকে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যান। পরে তাদের সামনে ‘ভবিষ্যতে এধরনের গর্হিত কাজ করবেন না’ মর্মে হুসেন মুচলেকা প্রদান করেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অসাধু পাখি শিকারিকে ছেড়ে দিয়ে তার সাথে থাকা জবাই করা মৃত পাখি প্রভাবশালীরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বুধবার বিকেলে জানান, হাকালুকি হাওড়ে পাখি শিকারের ঘটনা তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় হাকালুকি বিটের বনপ্রহরীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পাখি শিকারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে হাকালুকি হাওরে পাখি শিকারের ঘটনাটি তদন্তের জন্য বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন। অপর দুই সদস্য হলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান ও উপসহকারি প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) মঈন উদ্দিন। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে ইউএনও’র দফতরে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ।