বন্ধ হচ্ছেনা হাইড্রোলিক হর্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ৩:০৭:৩৩ অপরাহ্ন
মানা হচ্ছে না নির্দেশিকা
সিলেটে অভিযানে ৭৮টি জব্দ
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের সড়কগুলোতে শব্দদূষণ রোধে বন্ধ হচ্ছে না হাইড্রোলিক হর্ন। পরিববেশ অধিদপ্তর ও ট্রাফিক বিভাগের সব উদ্যোগ কেবল মামলা ও জরিমানায়ই সীমাবদ্ধ। এখনো উচ্চ শব্দের হর্ন বাজিয়ে ছুটছে যানবাহন। হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না এলাকাভিত্তিক নির্দেশিকা।
মহাসড়ক কিংবা আঞ্চলিক মহাসড়কগুলিতে উচ্চ শব্দের হাইড্রোলিক হর্নের পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ নগরেও চলছে এর অবাধ ব্যবহার। বিশেষ করে রাত ৮টার পর সিলেট নগরে প্রবেশ করে শত শত ট্রাক। নগরের ভেতর দিয়ে এই ট্রাকগুলো ভোলাগঞ্জ, জাফলংসহ বিভিন্ন রুটে যায়। কিন্তু এই টাকগুলো নগরের বুক চিরে যাওয়ার সময় একদিকে গতির ঝড় তোলে, অন্যদিকে উচ্চ শব্দের হর্ন বাজিয়ে যায়। ট্রাকগুলোর বেশিরভাগই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
রাতে উচ্চ শব্দে হর্নের বিষয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। কিন্তু থামছেনা এর ব্যবহার। এতে অসহনীয় যন্ত্রণার মাঝে বাস করছেন সড়কঘেষা বাসার বাসিন্দারা।
অথচ হাইড্রোলিক হর্ন হচ্ছে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী বিশেষ হর্ন। আমেরিকান স্পিচ অ্যান্ড হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। এর স্থিতি ৯ সেকেন্ডের বেশি হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। দেশের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে রাজধানীর মিশ্র (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) এলাকায় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল। এর চেয়ে উচ্চ মাত্রার শব্দে শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদ্রোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, বিরক্তি সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
স্বাস্থ্য ও শ্রবণের জন্য ক্ষতিকর বলে উচ্চ আদালতে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন আদালত। তখন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশকে। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে গাড়ির মালিক ও চালকদের কাছের থানায় হর্ন জমা দিতে এবং এই হর্ন ব্যবহার করা গাড়ি জব্দ করতেও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও সড়কগুলোতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার থামছেনা।
গত ২৯ নভেম্বর পরিবেশ মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিনও বলেছিলেন ডিসেম্বর থেকে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করা হবে। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণার পরও রাস্তায় অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর এ হর্ন।
এদিকে, গতকাল বুধবার সিলেটে শব্দদূষণবিরোধী অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযানে ৭৮টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দের পাশাপাশি প্রায় ৪১ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন অধিদপ্তর পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সদর উপজেলার সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস মোড়ে এ অভিযান চালান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এতে সহযোগিতা করে হাইওয়ে পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এমরান হোসেন। অভিযানে ৭৮টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয়। ৩৯ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করায় ৪০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় শব্দদূষণের কুফলসংক্রান্ত প্রচারপত্র বিলি করা হয়।
অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোহাইমিনুল হক, পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ, গবেষণাগার সহকারী মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬–এর বিধি ৮(২) লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)–এর ১৫(২) ধারায় ওই জরিমানা করা হয়। জরিমানার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।