শিক্ষাবর্ষ শুরুর ৩ সপ্তাহ পার : প্রাথমিকে বই পৌঁছেনি শতভাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ২:০২:৪৭ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের ৯ উপজেলায় ১ম ও ২য় শ্রেণীর বই পায়নি কেউ
এমজেএইচ জামিল :
শিক্ষাবর্ষ শুরুর ৩ সপ্তাহ পার হতে চললেও সিলেটের প্রাইমারী স্কুলে এখনো শতভাগ বই পায়নি ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। বছরের ১ম দিন বই উৎসবের আয়োজন করলেও বইয়ের সংখ্যা ছিল অর্ধেকের কম।
এরমধ্যে সুনামগঞ্জের অনেক স্কুলে বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। জানুয়ারীর ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার মধ্যে ৯ উপজেলায় ১ম ও ২য় শ্রেণীর কোন বই পৌঁছেনি। ঐ দুটি শ্রেণীতে ২ উপজেলায় বই পাওয়া গেলেও তা ৩৪ শতাংশ থেকে ৬৬ শতাংশের মধ্যে।
এদিকে ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলায় প্রাক প্রাথমিকে শতভাগ বই দেয়া হলেও ১ম ও ২য় শ্রেণীতে ৯০ শতাংশ, ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণীতে দেয়া হয়েছে ৬০ শতাংশ বই। আর এই তথ্য জানিয়েছে খোদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে বাস্তবে প্রাপ্তির সংখ্যা আরো কম হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
জানা গেছে, গেল বছরে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণে ডিসেম্বরের আগে সম্পূর্ণ বই ছাপাতে ব্যর্থ হয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ফলে হুমকীর মূখে পড়ে ১ জানুয়ারীর বই উৎসব। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে বই ছাপিয়ে বই উৎসব পালন হলেও দেয়া হয় নামমাত্র কয়েকটি বই। ১৫ জানুয়ারীর মধ্যে শতভাগ বই দেয়ার আশ^াস দেয়া হয় সরকারের উচ্চ মহল থেকে। ইতোমধ্যে ১৫ জানুয়ারী পেরিয়ে গেলেও সিলেট বিভাগের কোন প্রাইমারী স্কুলে পৌঁছেনি শতভাগ বই। এছাড়া সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলায় কয়েকটি শ্রেণীতে কোন বই পৌঁছেনি। এমন চিত্র শুধু প্রাইমারী নয়, বিভাগের মাধ্যমিকেও। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের দাবী প্রতিদিনই বই আসছে। তাই আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শতভাগ বই পৌঁছানোর আশ্বাস দেন তারা। তবে বই উৎসবের আগেও ঐ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এমন আশ^াস দিয়েছিলেন। কিন্তু ৩ সপ্তাহ পার হতে চললেও দেখা যায়নি আশ^াসের বাস্তবায়ন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত জেলায় প্রাক প্রাথমিকে ১ লাখ ৩৭ হাজারের বইয়ের চাহিদার শতভাগ বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। জেলার ১১ উপজেলায় ১ম শ্রেণীতে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯২১ কপি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে ২ উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় পৌঁছেছে মাত্র ২২ হাজার ৩০০ কপি। বাকী ৯ উপজেলায় ১ম শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি।
২য় শ্রেণীতে ২ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৬ কপি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে ২ উপজেলায় পৌঁছেছে ২৩ হাজার ৭১২ কপি। ২য় শ্রেণীতেও সদর ও দোয়ারাবাজার ছাড়া বাকী ৯ উপজেলার কোন শিক্ষার্থী পায়নি বই।
৩য় শ্রেণীতে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩২২ কপি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে ৬ উপজেলায় পৌঁছেছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ কপি বই। এর মধ্যে জামালগঞ্জ উপজেলায় ৫০ শতাংশ পৌঁছলেও ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বই পৌঁছেছে। জেলার অপর ৫ উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর, ছাতক, তাহিরপুরে ৩য় শ্রেণীর কোন বই পৌঁছেনি।
৪র্থ শ্রেণীতে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৪ কপি বইয়ের বিপরীতে ৬ উপজেলা জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জে পৌঁছেছে ২ লাখ ১০ হাজার ৮৬৪ কপি। বাকী ৫ উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর, ছাতক, তাহিরপুরে ২ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ কপি বই এখনো বাকী রয়েছে।
৫ম শ্রেণীতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬২ কপি বইয়ের বিপরীতে ৬ উপজেলা জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জে পৌঁছেছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৮ কপি বই। বাকী ৫ উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর, ছাতক, তাহিরপুরে এখনো ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৪ কপি বই বাকী রয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস. এম আব্দুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন উপজেলায় বই আসা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা শীঘ্রই সব উপজেলায় শতভাগ বই পৌঁছে যাবে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় প্রাক প্রাথমিকে ৬৯ হাজার ১০৮ কপি বইয়ের চাহিদার শতভাগ বই সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ১ম শ্রেণীর ২ লাখ ৭ হাজার ৮৩৮ কপি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮৩ কপি অর্থাৎ ৯৩ শতাংশ বই পৌঁছেছে। ২য় শ্রেণীর ১ লাখ ৯৯ হাজার ২১৫ কপি বইয়ের বিপরীতে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৬ কপি অর্থাৎ ৯৩ শতাংশ বই সরবরাহ করা হয়েছে। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীতে এখন পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে ৬০ শতাংশ বই। এরমধ্যে ৩য় শ্রেণীতে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩০ কপি চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৫ কপি, ৪র্থ শ্রেণীতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩০ কপির বিপরীতে সরবরাহ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭ কপি এবং ৫ম শ্রেণীতে ৪ লাখ ৭ হাজার ৮১১ কপির বিপরীতে সরবরাহ ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪১৮ কপি। এছাড়া জেলায় ইংরেজী ভার্সনের শতভাগ বই সরবরাহ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৬ শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্য থেকে প্রাক প্রাথমিকের ৫৬ হাজার ৯৪৪ কপি, ১ম শ্রেণীর ২ লাখ ২০ হাজার ৪৫৫ কপি ও ২য় শ্রেণীর ২ লাখ ২১ হাজার ২৮৯ কপি বই অর্থাৎ শতভাগ বই সরবরাহ করা হয়েছে। ৩য় শ্রেণীতে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৩০২ কপির চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ১২০ কপি অর্থাৎ ৯৩ শতাংশ। ৪র্থ শ্রেণীর ৪ লাখ ২১ হাজার ৬৭৪ কপি বইয়ের বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৪ লাখ ৭ হাজার ৩৮০ কপি অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ এবং ৫ম শ্রেণীর ৩ লাখ ৮১ হাজার ৭৮ কপি বইয়ের বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ কপি অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ।
এছাড়া জেলায় ইংরেজী ভার্সনের শতভাগ বই সরবরাহ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, তার জেলায় প্রাথমিকের সকল শ্রেণীতে ১২ লাখ ৪০ হাজার ২২৫ কপি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে ৬ লাখ ২০ হাজার ১১৩ কপি বই পৌঁছেছে। যা চাহিদার ৫০ শতাংশ বলে জানান তিনি। কেবল প্রাক প্রাথমিকে শতভাগ বই পৌঁছেছে। তবে তার কাছে সংরক্ষিত না থাকায় তিনি শ্রেণীভিত্তিক বইয়ের চাহিদা ও প্রাপ্তির তথ্য দিতে পারেন নি।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নানা সমস্যার কারণে সারাদেশের ন্যয় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায়ও বই পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে শীঘ্রই সব উপজেলায় প্রাথমিকের বই পৌঁছে যাবে।