সিলেটে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ : লোডশেডিংয়ে বাড়ছে দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : শীত মৌসুমে তুলনামূলক কম বিদ্যুৎ চাহিদার সময়ও টানা দুই সপ্তাহ ধরে সিলেটজুড়ে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। প্রতিদিনই চাহিদার অর্ধেকের থেকে একটু বেশী কিংবা অর্ধেক বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাচ্ছে সিলেট। ফলে লোডশেডিং বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে দুর্ভোগ। এ থেকে শীঘ্রই মুক্তির কোন আভাস দিতে পারছেনা বিদ্যুৎ বিভাগ। জ¦ালানী সমস্যার সমাধান না হলে এভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহ চলবে বলে জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন ব্যয় কমাতে দেশের জ্বালানী তেলচালিত বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেই কয়লা ও গ্যাসচালিত ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। গত ৯ জানুয়ারী থেকে হঠাৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এ কেন্দ্র থেকে। সম্প্রতি কয়লা সঙ্কটটের কারণে এটি পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। জানুয়ারীর ২য় সপ্তাহে ভোলা ও বরিশালের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও উৎপাদন কমে গেছে। এ ২ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। গড়ে ওই সময় ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। এখন শীতের সময় বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াটে। অথচ এটা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি লোডশেডিং করতে হচ্ছে। রাজধানীতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভাগীয় ও মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে বিদ্যুৎ কিছুট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলে চলছে তীব্র লোডশেডিং। বোরো মওসুমে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জ¦ালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিজেলের পরিবর্তে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎভিত্তিক সেচ প্রকল্পের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে লোডশেডিং বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
সিলেট শহরের বাইরে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চাহিদার চেয়ে কম সরবরাহ পাচ্ছে। বিদ্যুতের গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশ তাদের অধীনে। বর্তমানে দিনে ৬০০ মেগাওয়াট ও রাতে ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী এ সংস্থার আওতায় কোনো কোনো এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া সিলেট শহরেও বৃহস্পতিবার একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে। কখনো দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ, ভোলা ও বরিশালের ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন কমে গেছে। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছেনা কেউ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গভীর নলকূপের চালক সাইদুর রহমান বলেন, গেল সপ্তাহে বোরো আবাদ শেষ হয়েছে । জমি শুকিয়ে আছে। জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ২৪ ঘণ্টাই সেচপাম্প চালু রাখতে হয়েছে। কিন্তু ২ সপ্তাহ ধরে ধরে দিনে গড়ে ৪/৫ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখারহাওর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) থেকে দুই বিঘা জমিতে সেচ দিতে চার ঘণ্টা লেগেছে। সকাল ৮টা থেকে সেচ শুরু হইছে, এর মধ্যে দুইবার কারেন্ট গেছে। কারেন্ট না গেলে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই সেচ শেষ হয়ে যেতো। শুধু সময়ের কারণে পাম্প মালিককে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা।
এদিকে লোডশেডিং বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন নগরীর সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীগণ। তারা বলেন, এমনিতেও আমরা লোকসানে আছি। গেল গরমের মওসুমে শিডিউল লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হয়েছে। এবার শীতের দিনেও এত লোডশেডিং হলে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবেনা।
এ ব্যপারে সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. জারজিসুর রহমান রনি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিনে সিলেট বিভাগে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৭০ মেগাওয়াট। এছাড়া সিলেট জেলায় ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৫৪ মেগাওয়াট।
তিনি বলেন, সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লোডশেডিং অব্যাহত থাকবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ এবং কয়েকটি কেন্দ্রে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।