কুষ্ঠ হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০:১৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ৪ মাসের গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড। বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর বিপাকে পড়েন ভর্তিকৃত ১৪ রোগী। সরকারি বন্ধের কারণে শুক্র ও শনিবার পুনঃসংযোগ না দিলে তাদের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এদিকে হাসপাতালের মতো সরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠানের গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্নের ঘটনায় সিলেটজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটাকে অমানবিক বলেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
যদিও শুক্রবার রাত ৮টার দিকে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়নি বলে দৈনিক জালালাবাদকে নিশ্চিত করছেন সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা: মির্জা ওমর বেগ। তিনি জানান, বকেয়া বিল দিতে হলে আমাদেরকে রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সেদিন সরকারী অফিস খুলবে। সেদিন বিল দিয়েই সংযোগ নিতে হবে। এর মধ্যে ২ দিন ভর্তি থাকা রোগীদের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, নগরীর শেখঘাট কলাপাড়ায় প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালের অবস্থান। এই হাসপাতালে প্রতিনিয়তই ২০ থেকে ২৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। অবকাঠামো, জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটে থাকা ওই হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভর্তিকৃত রোগীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে উৎকন্ঠা। অস্বস্তিতে পড়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা।
সংশ্লিষ্টরা জানানা, কুষ্ঠ হাসপাতালের হিসাবরক্ষণসহ বেশ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার পদ খালি থাকায় গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও স্টাফদের বেতন ভাতা পরিশোধেও সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৮ হাজার টাকা বকেয়ার দায়ে আকস্মিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভর্তিকৃত রোগীদের খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ায় কুষ্ঠ হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি জানান, কুষ্ঠ হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানালেও তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। বিষয়টি সম্প্রতি সিলেটের জেলা প্রশাসকের নজরে আনলে তিনি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভর্তিকৃত রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, কুষ্ঠ হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ কিংবা গ্যাস কর্তৃপক্ষ কেউ যোগাযোগ করেনি। এরপরও আমি বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জালালাবাদ গ্যাসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বকেয়া বিলের জন্য একটি সরকারী হাসপাতালের গ্যাস লাইন কেটে দেয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। যদি লাইনটি কেটেছে কোম্পানির বিপণন ও সরবরাহ বিভাগ।
জালালাবাদ গ্যাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ২দিন আগে টিবি হাসপাতালের লাইনও কেটে দেয়া হয়েছিল সেটি পুনঃসংযোগ দেয়া হয়েছে। কুষ্ঠ হাসপাতালের গ্যাস লাইনেরও পুনঃসংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এ বিষয়ে জালালাবাদ গ্যাস টি এন্ড ডি সিস্টেম লিমিটেড এর উপ মহাব্যবস্থাপক (সিলেট মেট্রো) প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, গ্যাসের বকেয়া বিলের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশ রয়েছে। সরকারী হাসপাতালের বিল সরকারী তরফ থেকে দেয়া হয়। সেখানেও ৪ মাসের বকেয়া বিল থাকার কথা নয়।
তিনি বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা যদি কমপক্ষে অর্ধেক বিল পরিশোধ করে তাহলে ছুটির দিনেও পুনসংযোগ দেয়া হবে।