শাহবাজপুর-কুলাউড়া রেলপথ : তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পরও কাজ হয়েছে ২৫ ভাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০:১৯ অপরাহ্ন
৪র্থ দফায় সময় বৃদ্ধির আবেদন ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের
স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বৃদ্ধির পর গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় চতুর্থ দফায় আবারও সময় বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এতে প্রকল্পের কাজ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে সম্প্রতি রেলওয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে পরিদর্শনে করেন। প্রতিনিধিদলের প্রধান রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) মামুনুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে যাই। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। সরকারের উচ্চপর্যায়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণের’ ব্যবস্থাপক অনিন্দ্য সান্যাল গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা, মালামালের মূল্যবৃদ্ধি, বিভিন্ন স্থাপনার নকশা অনুমোদনে রেল বিভাগের দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা সমস্যার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সময় বৃদ্ধি করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ নামের ভারতের দিল্লির একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায়। ২০১৮ সালের ৫ মে কাজ শুরু হয়। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তিন দফায় সময় বৃদ্ধি করা হয়। এখন পর্যন্ত কাজে অগ্রগতি মাত্র ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। চতুর্থ দফায় এ বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বর প্রতিনিধিদল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যায়।
এদিকে ৪ জানুয়ারী প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নিরাজ কুমার জাইশাওয়াল। এ সময় তিনি বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর রেলষ্টেশন ও মুড়াউল রেলষ্টেশন এলাকায় চলমান নির্মাণ কাজ সরেজমিনে ঘুরে দেখেন। এছাড়াও শাহবাজপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রেলপথ নির্মাণ কাজের ও কুলাউড়া উপজেলার আছুরিঘাট এলাকায় ব্রিজ নির্মাণের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারী মিসেস এস সোনালী শাহী, রেল নির্মাণ কোম্পানীর প্রকল্প পরিচালকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশন থেকে শাহবাজপুর স্টেশনের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজের হবে। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। রেলপথে ৬টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো কুলাউড়া, জুড়ী, দক্ষিণ ভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর। রেলপথটিতে মোট ৫৯টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
সূত্র জানায়, রেলপথটি ট্রেন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০০২ সালের ৭ জুলাই কর্তৃপক্ষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার লোকজন দুর্ভোগে পড়েন। পুনরায় ট্রেন চলাচল চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে একনেকের সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ১২২ কোটি টাকা এবং ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে পাওয়ার কথা। ওই বছরের (২০১৫) ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন করেন।