গরু পাচারে বাধা দেওয়ায় বাড়ি ভাংচুর, সংঘর্ষের আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:১৭:৩০ অপরাহ্ন
আব্দুল জলিল, কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামাগ্রাম দিয়ে প্রতি রাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে গরু ও মহিষ। এসব গরু মহিষ পাচারে বাধা দেওয়ায় নজির উদ্দিন নামে একজনের বাড়িতে ভাংচুর করেছেন মাসুদ আহমদের নেতৃত্বে গরু মহিষ পাচারকারীরা। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাত ১০টায় লামাগ্রামের নজির উদ্দিনের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় পাচারকারীদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে আহত হোন নজির উদ্দিনের ফুফু আলফাতুন বেগম। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের সংঘর্ষ। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে সালিশ নিয়ে আসলে তিনি ‘অবৈধ কোন বিষয়ে’র বিচার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। তবে ওয়ার্ড মেম্বার বললেন এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা এখানে গরু নিয়ে কোন ঘটনাই ঘটেনি। আর অভিযুক্ত মাসুদ আহমদ জানান নজির উদ্দিন ভারত থেকে আসা গরু ডাকাতি করতে গেছিল এর জন্য এলাকার মানুষ তার বাড়িতে হামলা করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভারত বাংলাদেশ সীমানা পিলার ১২৫৯ এর ওপারে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় প্রতিদিন ওপার থেকে চোরাই মালামাল ও গরু মহিষ আসে বাংলাদেশে। এগুলো থেকে পুলিশের নামে টাকা তুলেন মেম্বার দেলোয়ার হোসেন। আর বিজিবির নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা উত্তোলন করেন আবু সাইদ। যার কারণে বিজিবির পোস্টের পাশ দিয়ে ভারত থেকে গরু মহিষ আসলেও তারা সেগুলোতে বাধা দেয় না। মাঝেমধ্যে আই ওয়াশ করার জন্য দু-চারটি গরু আটক করা হয়। আর পুলিশ তো কখনো অভিযানেই যায় না। তবে চোরাকারবারের বিপক্ষে কেউ কথা বললে মারধর ও হামলার শিকার হতে হয়। শুক্রবার শতাধিক গরু বাংলাদেশে আসে। সেগুলো থেকে ১০টি গরু রেখে দেয় কামালবস্তির বাসিন্দারা।
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, মেম্বার দেলোয়ার হোসেন পুলিশের নামে ইন্ডিয়ান গরুর গাড়ি প্রতি ১০ হাজার টাকা ও আবু সাইদ গরু প্রতি ১ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। তিনি আরো বলেন এসব গরুর মালিক গোয়াইনঘাটের গোলাম হোসেন (গুলাপ)। তার কাছ থেকেই মূলত টাকা আসে। শনিবার গোলাম হোসেন কোম্পানীগঞ্জের চরার বাজার এসেছিলেন তার আটককৃত গরুগুলো নেওয়ার জন্য। সালিশ বিচারের মাধ্যমে রাতে জনতার হাতে আটক তার ১০টি গরু ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
নজির উদ্দিন জানান, শুক্রবার রাত ১০টায় ভারত থেকে মাসুদ আহমদ ও রুকন মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক গরু আসে বাংলাদেশে। গরুগুলো কামাল বস্তি এলাকায় যেতেই কয়েকটি গরু ছিনিয়ে নেয় সেখানকার বাসিন্দারা। পরে মাসুদ আহমদ ও রুকন মিয়ার নেতৃত্ব আনছার আলী, ইমাম উদ্দিন, ইনজাদ মিয়া, ফজল মিয়া, শামীম, নুর উদ্দিন, মুনসুর সহ বেশ কয়েকজন গরু ও মাদক পাচারকারী আমার বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে ডুকে রামদা দিয়ে দেওয়ালে কুপিয়েছে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমার ফুফু আলফাতুন বেগম আহত হোন এবং ঘরের টিনে অনেকগুলো ছিদ্র হয়েছে। আমার বাড়ি সীমান্ত এলাকায় হওয়াতে গরু পাচারকারীরা আমার বাড়ির উপর দিয়ে গরু ও মহিষ নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। ঘর থেকে বের হলে তারা রামদা দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। কারণ আমরা বাহিরে লাইট ঝালালে তাদের নাকি সমস্যা হয়। আলোর মধ্যে গরু দেখা যায়। তিনি আরো বলেন গরু মহিষ পাচারকারীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের ভয়ে কেউ কোন কথা বলার সাহস পায় না।
মাসুদ আহমদ জানান, নজির উদ্দিন রাতে ইন্ডিয়া থেকে আসা গরু ডাকাতি করতে গেছিল যার জন্য এলাকাবাসী তার বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি আরো বলেন, নাজিম ও মাসুক তারা ৫০০ টাকা রোজে গরু ইন্ডিয়া থেকে নামিয়ে দেয় তাদেরকে নজির উদ্দিন ডাকাতির সময় মারধর করে। এরপর এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করেছিল। তবে সেখানে উপস্থিত ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন তাদেরকে মারামারি করতে দেন নি।
গোলাম হোসেন (গুলাপ) বলেন, আমার একার তো গরু আসে না, অনেকেই গরু আনে ভারত থেকে। আমরা গরুর ব্যবসা করছি। আমার গরুর খামারও আছে। সেখানে আমি ভারতীয় গরু রাখি। শনিবারে আমার ও নাসির ভাইয়ের গরু আসছিল লামাগ্রাম দিয়ে। সেখান থেকে আমাদের কয়েকটি গরু নিয়ে গেছিল তারা। পরে সেখানকার মুরব্বিদের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরুগুলো নিয়ে আসি।
ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন জানান, গরু পাচার নিয়ে এলাকায় কোন মারামারি হয়নি এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে মারামারি হয়েছে। তিনি গরু থেকে পুলিশের নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন এখানে পুলিশের নামে কেউ টাকা তুলে না। গরুগুলো লুকিয়ে তারা ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তিনি আরো বলেন, রাতের আধারে গরু মহিষ যারা নিয়ে আসে তারা এলাকার অনেকের ফসল নষ্ট করে ফেলে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বিচারও হয়েছে। আমি গরু মহিষ পাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে অনেক সমস্যায় পড়েছিলাম। সরাসরি পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকতা আমার বাড়িতে এসে থ্রেড দিয়ে গেছেন। এর পর থেকে আমি এ বিষয়ে আর কোন কথা বলি না।
উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাস্টার ফয়জুর রহমান বলেন, দেলোয়ার মেম্বার পুলিশের টাকা উত্তোলন করে শুনেছি কিন্তু তাকে জিজ্ঞেস করলে সে এ বিষয়ে কিছুই জানেনা বলে। তাঁর পরিষদের সদস্যের উপর এমন অভিযোগ তিনি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বলেন সে যে মেম্বার হওয়ার পর এই কাজ করছে তা ত নয়। সে তো আগে থেকেই এই লাইনে ছিল। তা যেনেই ত মানুষ তাকে মেম্বার বানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উৎমা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার রফিক বলেন, আমাদের সীমানায় গরু মহিষ পাচারের কোন খবর বা এ নিয়ে কোন মারামারি খবরও পাইনি।
গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রভাস কুমার সিং বলেন, মারামারির বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর পুলিশের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। গরু যে এরিয়া দিয়ে নামে সেখানে যাওয়া অনেক কঠিন। আমাদের পুলিশ যখন সেখানে যায় তখন তারা গরু নামায় না। তিনি আরো বলেন, পুলিশের নামে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে এমন লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।