গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:১৪:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: এমনিতেই রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানাগুলোর অবস্থা ভালো নেই। এরমধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে সম্প্রতি সরকার গ্যাসের দাম প্রতি ঘন মিটার ৪ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করায় ইউরিয়া সারের উৎপাদন ব্যয় বর্তমানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আনুমানিক ৮লাখ মেট্রিক টন সার সরবরাহের বিপরীতে উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৪শ ৪০ কোটি টাকা।
এদিকে উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে ইউরিয়া সার বিক্রি করায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোকসান দিন দিন বাড়ছে। সংস্থাটির উৎপাদন পর্যায়ে আর্থিক তি বা ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬শ ৭৪ কোটি টাকা। এই ঘাটতির অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিশোধের কথা। কিন্তু বার বার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণলায়টি বকেয়া অর্থ পরিশোধ করছে না। এ কারণে বর্তমানে বিসিআইসির আওতাধীন সার কারখানাগুলো তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বর্ধিত হারে গ্যাসের দাম পরিশোধে বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও গ্যাস বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সার কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সংস্থার আওতাধীন ছয়টি কারখানার মধ্যে বর্তমানে চারটি চালু রয়েছে। এ অবস্থায় ভর্তুকির অর্থ দ্রুত পরিশোধের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে আবেদন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগকে জানানো হয়েছে, দেশে সারের চাহিদা মেটাতে সংস্থাটি কর্তৃক বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সারের ভর্তুকি মূল্য পরিশোধ করা হলেও অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত সারের ভর্তুকি মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে না। ভর্তুকির অর্থ আদায়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের কথা থাকলেও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের আবেদন জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সারের ভর্তুকির অর্থ নিয়মিত পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিসিআইসির হিসাব মতে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ইউরিয়া সারের দাম আমদানিকৃত সারের তুলনায় কম হওয়ায় বিসিআইসির ভর্তুকির অর্থ পরিশোধের পরও ছয় বছরে সরকারের প্রায় ৮ হাজার ৭শ ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।
সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিসিআইসির আওতাধীন সার কারখানাগুলোতে উৎপাদিত ইউরিয়া সার ডিলার পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গত ছয় অর্থবছর (২০১৬-২০১৭ থেকে ২০২১-২০২২) ধরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও নির্ধারিত দরে (প্রতি টন ১৪ হাজার টাকা) ডিলারদের কাছে ইউরিয়া সার সরবরাহ করে আসছে সংস্থাটি। সে হিসেবে ছয় অর্থবছরে উৎপাদন পর্যায়ে বিসিআইসির মোট পুঞ্জীভূত আর্থিক তি বা ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬শ ৭৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে বিসিআইসি কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দরে ইউরিয়া সার বিক্রি করছে, যা উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। ফলে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসান দিচ্ছে এবং বর্তমানে বিসিআইসি’র আওতাধীন সার কারখানাগুলো তীব্র নগদ তারল্য সংকটে রয়েছে। সংস্থার আওতাধীন ছয়টি কারখানার মধ্যে বর্তমানে চারটি চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কারখানা ৩৫ বছরের অধিক পুরাতন হওয়ায় এগুলোর ধারাবাহিক উৎপাদন সমতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। অর্থের অভাবে কারখানাগুলোর নিয়মিত ওভারহোলিং, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন ও রণাবেণ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ২০ দশমিক ৮৩ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়া সারের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলার সংকটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে অনীহা প্রকাশ করায় ইউরিয়া সার আমদানি বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশীয় কারখানায় ইউরিয়া সারের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ব্যবস্থাপনা শিথিল করা না গেলে দেশে সার সংকট দেখা দিতে পারে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে বলে মনে করে শিল্প মন্ত্রণালয়।