সিলেটে আবাসিক হোটেলে ৪ দিনে ৩ লাশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১৫:৫১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে আবাসিক হোটেলে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে। গত ৪ দিনে নগরীর ৩ আবাসিক হোটেলে ৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। সবগুলো মৃত্যুকেই স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করছে পুলিশ। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২ জন পুরুষ ভিক্ষুক ও ১ নারী রয়েছেন। মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে শুধু হোটেল থেকে ৩ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নগরী ছাড়াও জেলায় চলছে আলোচনা।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হরিনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নাজিম উদ্দিন নাজির (৬০) পেশায় ছিলেন ভিক্ষুক। প্রতিদিনের মতো ভিক্ষা শেষে তিনি শনিবার রাতে নগরীর বন্দরবাজারের হোটেল আল ফয়েজের ১২ নম্বর কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। রোববার সকালে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ধারণা স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে।
শুধু নাজিম নয়, সিলেটে মাত্র দুদিন আগে শুক্রবার অপর একটি আবাসিক হোটেল থেকে শাহেদ মোশারফ (৩৫) নামে আরও একজন ভিক্ষুকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও তার দু’দিন আগে বুধবার নগরীর শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী নিলীমা বেগম লিলির (১৯) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তবে তিনটি ঘটনার মধ্যে দুটি মৃত্যুই স্বাভাবিক বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ। তবে সাবেক স্বামীর হোটেল থেকে নিলীমা বেগম লিলির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য রয়েই গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তার সাবেক স্বামীকে খুঁজছে।
জানা যায়, বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাইপাস রোডের মোমিনখলা এলাকায় শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। হোটেল কর্মচারীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৫নং কক্ষের দরজা ভেঙে লিলি নামে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত লিলি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দুলিয়ারবন্দ গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে এবং ওই আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী। আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সঙ্গে লিলির অনেক দিন আগে ছাড়াছাড়ি হলেও জহিরের সঙ্গে যোগাযোগ বা মেলামেশা ছিল। লাশ উদ্ধারের পর তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পায়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, এ ঘটনার পর থেকে হোটেল পরিচালক জহির পলাতক রয়েছেন। তিনি সিলেটের বাইরে অবস্থান করছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর রয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় লিলির বাবা বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বন্দরবাজারের লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে অপর ভিক্ষুক শাহেদ মোশারফের (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। মোশারফ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও মিয়াপাড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে তিনি অসুস্থতা অনুভব করেন। রুমেই বিশ্রামে ছিলেন, কিন্তু ওইদিন দুপুরের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলের ২৫ নম্বর কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় তার রুমে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার কাগজপত্র পাওয়া যায়। পুলিশ ধারণা করছে, তিনি যক্ষ্মা রোগী ছিলেন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মারা গেছেন।
অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩ লাশ উদ্ধারের বিষয়ে এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস জানান, দক্ষিণ সুরমায় নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অন্য দুটি লাশ উদ্ধারের বিষয়ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।