কারণে-অকারণে ‘পরিবহন ধর্মঘট’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৩:৩০:১২ অপরাহ্ন
মানুষের দুর্ভোগ, আতঙ্ক
জালালাবাদ রিপোর্ট : সিলেটে যেন ‘আতঙ্কের’ অপর নাম হয়ে দাঁিড়য়েছে পরিবহন ধর্মঘট। যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানা দাবিতে, কারণে-অকারণে ক’দিন পর পরই ডাক দেয়া হয় পরিবহন ধর্মঘটের। কখনও হঠাৎ, কখনো আগেই ঘোষণা দিয়ে। কখনও জেলা জুড়ে, কখনও বিভাগ জুড়ে। মাঝে মাঝে তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। আর এর চরম খেসারত দিতে হয় অগণিত যাত্রী ও জনসাধারণের।
ঘন ঘন এসব ধর্মঘট আহবানের গল্প প্রায় একই। মঞ্চায়ন, চিত্রায়নও অভিন্ন। প্রথমে দাবি-দাওয়া সামনে রেখে ধর্মঘট আহবান করা হয়, এরপর মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের আড়ালে চলে আলোচনা, দরকষাকষি। এরপর আলটিমেটাম দিয়ে করা হয় প্রত্যাহার কিংবা স্থগিত।
পরিবহন সংগঠনগুলো ধর্মঘটের ডাক দিয়েই রাস্তায় নামিয়ে দেয় হাজারো শ্রমিক। তাদের পিকেটিং থেকে রেহাই পায়না রোগীবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স কিংবা বিদেশগামী যাত্রীরাও। তাদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায় খোদ প্রশাসনকেও।
হঠাৎ ধর্মঘটের ডাক দিলে কতশত মানুষের জীবনধারায় ছন্দপতন হয়, দৈনন্দিন রুটিন এলোমেলো হয় তাঁর কোন শেষ নেই। অনেকে দৈনিক জালালাবাদের কাছে তাদের আক্ষেপ ও ক্ষোভের কথা শুনিয়েছেন গতকালও। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা ওসমানীনগরের দয়ামির ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানালেন, জরুরী কাজে তার ঢাকার যাবার কথা ছিলো গতকাল সকালে। এজন্য তিনি প্রস্তুতিও নেন। কিন্ত আগেরদিন সন্ধ্যা রাতে হঠাৎ জানতে পারেন সোমবার থেকে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরবিহন ধর্মঘট। এমন সংবাদ শুনে তার মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়ে। গতকাল সকালে এক নিকটাত্মীয়কে পাঠালেন ট্রেন স্টেশনে। কিন্তু সেখানে গিয়েও আক্ষেপের গল্প। টিকিট নেই। ধর্মঘটের খবরে অসহায় মানুষজন ভিড় করছেন রেল স্টেশনে। কিন্তু তাকে ঢাকা যেতেই হবে। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালালেন আকাশ পথে যাবেন। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ। পরে দুপুরের দিকে জানতে পারলেন ধর্মঘট স্থগিত। কিন্তু জানার আগেই তার পরিকল্পনা হয়ে যায় এলোমেলো।
সকাল ৬টার দিকে হুমায়ুন রশীদ চত্বরে পাওয়া যায় নবীগঞ্জের বিশ^নাথের এক সৌদী প্রবাসীকে। ঢাকা থেকে তার ফ্লাইট বুধবার। কিন্তু ধর্মঘট আতঙ্কে তিনি ২ দিন আগেই ঢাকায় পৌঁছতে চান। কারণ সময়মতো যেতে না পারলে তার টিকিট যাবে, ভিসাও যাবে।
শুধু কি ওই প্রবাসীরা? আরো কত শত, কত হাজার মানুষের ভোগান্তি ও দীর্ঘশ^াস লুকিয়ে আছে এমন আকস্মিক ধর্মঘটে তার কোন হিসেব নেই।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নগারিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ধর্মঘট ডাকার আগে উচিত হলো সরকার, প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সাথে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা। এক বৈঠকে না হলে একাধিকবার বৈঠক করে সমাধান বের করা। কিন্তু তা না করে আকস্মিক ধর্মঘটের ডাক দিয়ে মানুষকে বেকায়দায় ফেলা কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে তারা নিজেরা তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়, পাশাপাশি সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এছাড়া ধর্মঘট দিয়ে রাস্তায় শ্রমিক নামিয়ে যা করা হয় তা এক কথায় জঘন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত (১৩ সেপ্টেম্বর, ৩০ অক্টোবর, ১৭ নভেম্বর ও ২৪ নভেম্বর) তিন মাসে ৪ বার সিলেটে ডাক দেয়া হয় পরিবহন ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের। সর্বশেষ গতকাল ২৩ জানুয়ারী সোমবার ফের ডাক দেয়া হয় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। যদিও কয়েক ঘন্টার মাথায় প্রত্যাহার করা হয়।
ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আলী আকবর ওরফে রাজনের মুক্তির দাবিতে এ ধর্মঘট বলে জানায় সংগঠনটি। ধর্মঘটের কারণে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন সিলেট ছেড়ে যায়নি। অন্য এলাকা থেকেও সিলেটে কোনো যানবাহন আসেনি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে নগরের বাইরে সকাল থেকে অল্প সংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে ঢাকায় প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কয়েক দফা বৈঠক হয়। পরে প্রশাসনের কাছ থেকে শ্রমিক নেতার মুক্তির বিষয়ে আশ্বস্ত হলে বেলা ১১টা থেকে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মঈনুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের আশ্বাসে এবং কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের নির্দেশনায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।
পরিবহন শ্রমিকনেতা আলী আকবরকে গত ৭ ডিসেম্বর সিলেট নগরের সুরমা মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।