সিসিকের জন্মনিবন্ধন সার্ভার হ্যাকড্!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২:১৫:০০ অপরাহ্ন
১০ দিন পর পুনরুদ্ধার, জনভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধনের সার্ভার হ্যাকড্ এর ঘটনায় তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন নিবন্ধন করতে আসা জনসাধারণ। যদিও টানা ১০ দিন পর বৃহস্পতিবার সার্ভার পুনরুদ্ধার হয়েছে।
সিসিকের গুরুত্বপূর্ণ এমন সার্ভার হ্যাক হওয়ার ঘটনাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে। তবে এটাকে হ্যাকড বলতে নারাজ জন্মনিবন্ধনের কেন্দ্রীয় অধিদপ্তর রেজিষ্ট্রার জেনারেল অফিসের আইটি বিশেষজ্ঞগণ। তারা এটাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলেই মনে করছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই ঘটনাকে সিকিউরিটির ত্রুটি জনিত কারণে কেউ সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে থাকতে পারে বলেন মনে করেন। এর ফলে ঐ সার্ভার ব্যবহার করে কিছু ভুয়া জন্মনিবন্ধনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করেন তারা। তবে বিষয়টি রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস ও স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক কার্যালয়ের আইটি বিশেষজ্ঞগণ খতিয়ে দেখছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারী ২টা ১৩ মিনিট থেকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্মনিবন্ধন সার্ভারে সংশ্লিষ্টরা প্রবেশ করতে গেলে দেখতে পান কেউ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলেছে। একাধিক বার চেষ্টার পর তারা বুঝতে পারেন পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ ৩য় কোন পক্ষের হাতে চলে গেছে। সিসিকের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বিষয়টি স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক ও রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে অবহিত করা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ফের সচল হয় জন্মনিবন্ধনের সার্ভার। টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার কারণে সিসিকের নিবন্ধন বিভাগে ৩ হাজারেরও বেশী জন্মনিবন্ধন আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে।
সিসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জন্মনিবন্ধন সার্ভারে সিসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ আবেদনের প্রেক্ষিতে তথ্য আপডেট করতে পারেন। এর বাইরে তারা সার্ভারের লগিনের কোনকিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করতে পারেন না। এমনকি পেইজ তৈরী করে এডমিন বানানোর কাজটি করে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সার্ভার হ্যাকড্ করে ভুয়া জন্মনিবন্ধন আপডেট করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে সিসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সর্বশেষ আপডেট দেয়া আবেদনের সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে এই ১০ দিনে কোন কোন আবেদন আপডেট হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিসিকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার আশঙ্কা এই কয়দিনে কমপক্ষে ১০০ টি ভুয়া জন্মনিবন্ধন আপডেট হয়েছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের আইটি কর্মকর্তাগণ সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন এবং ভুয়া নিবন্ধন চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ পরিচালক মোঃ মামুনুর রশীদ দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সিটি কর্পোরেশনের জন্মনিবন্ধন সার্ভারে ত্রুটি ছিল সেটা সারানো হয়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা হ্যাকড্ হওয়ার আশঙ্কা করেছিলাম। তবে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস এই ঘটনাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে চিহ্নিত করেছেন। এর সাথে কারা জড়িত তাদের খোঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ১৫ জানুয়ারী থেকে ২৫ জানুয়ারী পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধনের সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে ছিলনা। কোন অসাধু চক্র অনুপ্রবেশ করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে। পরবর্তীতে রেজিষ্ট্রার জেনারেল ও স্থানীয় সরকার অফিস বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে। অবশেষে বৃহস্পতিবার থেকে সার্ভারটি স্বাভাবিক হয়েছে। টানা ১০ দিন সার্ভার বন্ধ থাকায় ৩ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এই আবেদন আপডেট এবং ডেলিভারি দিতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে টানা ১০ দিন সার্ভার বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সেবা নিতে আসা জনসাধারণ। জানুয়ারী মাস জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় অনেক অভিভাবক এই সময়ে জন্মনিবন্ধনের জন্য কাউন্সিলার কার্যালয় ও নগরভবনে ভীড় জমান। এদিতে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরি, বিয়ে নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি, জমি ক্রয়-বিক্রয়, জমি নিবন্ধন প্রভৃতি কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদর্শন আইন দ্বারা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্মনিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্ভার হ্যাক হওয়া কিংবা ডাউন হওয়ার বিষয়টি উদ্বেজনক। এব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো সতর্ক থাকা উচিত।
নগরীর সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা জীবন আহমদ জানান, তিনি প্রবাসে যেতে তার পাসপোর্টে ভুল সংশোধন করতে চেয়েছিলেন। তার হাতে সময় কম ছিল। কিন্তু টানা ১০ দিন অনেক অফিস ঘুরেও জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন নি। সিটি কর্পোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানে এমন ভোগান্তি মেনে নেয়া যায়না।