ইসরাইলি বর্বতায় ৯ ফিলিস্তিনি নিহত, নির্বিকার বিশ্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৩৪:১০ অপরাহ্ন
আরো হামলার শঙ্কা
জালালাবাদ রিপোর্ট : ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে অন্তত আরও ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলের শুরু করা অভিযানে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরাইলের আরো হামলার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নিহত ৯ জনের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মাত্র একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ২৪ বছর বয়সি ওই ফিলিস্তিনির নাম সায়েব ইসাম ঝরেকি। তাছাড়া নিহতদের একজন বৃদ্ধ নারী বলে জানা গেছে।
আহতদের জেনিনের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে ইসরায়েলি সেনারা অ্যাম্বুলেন্সকে বাধা দিচ্ছে। ডাক্তারদের ঘটনাস্থলে যেতে দিচ্ছে না। সবচেয়ে মারাত্মক, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে।
জেনিন সরকারি হাসপাতালের প্রধান ওয়াসিম ব্যাকের আলজাজিরাকে বলেন, ‘এ রকম হামলা আগে কখনও দেখা যায়নি। আগের কোনো অভিযান থেকে এত মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়নি।
ইসরায়েলি সেনারা আহতদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে সরাসরি গুলি করছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে সবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
জেনিন কেন লক্ষ্য :
জেনিন অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর। শহরের শরণার্থী শিবিরটি বেশ বিখ্যাত। ১৯৫৩ সালের বিধ্বংসী তুষারঝড়ের পর এ শিবির প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এতে কয়েক হাজার শরণার্থী আশ্রয় নেয়। এখানে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি শরণার্থী রয়েছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসন, দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে এ শিবিরের বেকার তরুণদের মধ্যে দারুণ অসন্তোষ রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে। তারা নানান সময়ে ইসরায়েলের সেনা ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। এমন অভিযোগে গত বছর জেনিন শরণার্থী শিবিরে নিয়মিত নৈশকালীন অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
২০২২ ছিল মারাত্মক :
২০০৬ সালের পর ২০২২ সালে পশ্চিমতীরের পরিস্থিতি ‘মারাত্মক’ ছিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। ওই বছর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৩০ শিশুসহ মোট ১৭১ ফিলিস্তিনি পশ্চিমতীরে নিহত হয়। আহত হয় অন্তত আরও ৯ হাজার।
একই বছর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের তিন দিনের হামলায় ১৭ শিশুসহ নিহত হয় মোট ৫৩ ফিলিস্তিনি। অর্থাৎ গত বছর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে মোট ২২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
পশ্চিমতীরে ২৬ দিনে নিহত ২৯ :
চলতি বছরের শুরু থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ২৯ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু পাঁচজন। আর নিহতের ১৮ জনই জেনিনের।
নির্বিকার বিশ্ব :
গত বছর থেকে জেনিনে ইসরায়েলি অভিযান তীব্র হলেও আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে তা নিয়ে নির্বিকার মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সুযোগে ইসরায়েল আইন বহির্ভূত হামলা ও অভিযান বাড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েল বিশেষজ্ঞ আলিফ সাব্বাগ আলজাজিরাকে বলেন, বৃহস্পতিবারের অভিযানকে সতর্ক বার্তা হিসেবে নিতে হবে। তার মানে, জেনিনে শিগগির আরও বড় ধরনের অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েল যা খুশি করছে। আরব দেশ বা আন্তর্জাতিক মহল কেউ কিছু বলছে না। এই উদাসীনতা নৃসংসতা চালাতে, অভিযান অব্যাহত রাখতে ও ফিলিস্তিনি হত্যা বাড়াতে ইসরায়েলকে উৎসাহিত করছে।
এই যে দেখুন তারা ফিলিস্তিনের হাসপাতালে, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, যাকে ইচ্ছা তাকে গুলি করছে। সব কিছু কিন্তু কোনো ধরনের পাল্টা জবাব বা প্রতিবাদ না থাকার কারণেই হচ্ছে।’
এমন কি আলজাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকেও হত্যা করে তারা পার পেয়েছে। তাই ইসরায়েলকে আইনের আওতায় আনা না গেলে এই ধরনের হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকবে, এটা ধরে নেওয়া যায়।
আলিফ সাব্বাগের প্রশ্ন ইসরাইলের এত কিছু দেখার পরও কি বিশ^ নিরব থাকবে?