সিলেট, খুলনা ও ঢাকা থেকে বেশি মানব পাচার : বিবিসির প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:৩৪:২৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশে ২০২০ সালে যেসব মানবপাচারের ঘটনা শনাক্ত করা গেছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলে। জাতিসংঘের মানবপাচার বিষয়ক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদেন এ খবর প্রকাশ হয়েছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর যৌথভাবে ‘ট্রাফিকিং ইন পার্সনস ইন বাংলাদেশ’ নামে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
জেলা হিসেবে বাংলাদেশের সাতটি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা বেশি শনাক্ত করা হয়েছে। এসব জেলা হচ্ছে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জ। এসব জেলা থেকে প্রতি লাখে দেড় জনের বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়।
ঢাকা, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের মানবপাচার চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়ার ঘটনা ঘটে খুলনা বিভাগে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে , বাংলাদেশের সব এলাকার বাসিন্দারাই মানব পাচারের শিকার হয়। তবে ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট- এই তিনটি অঞ্চলের মানুষ বেশি পাচার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে।
যেসব এলাকার সাথে ভারতের সীমান্ত বেশি সেসব এলাকায় মানবপাচারের ঘটনা বেশি ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় খুলনা বিভাগের কথা। এই বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত রয়েছে এবং সেখান থেকে কলকাতাও দূরে নয়।
এ বিষয়ে অভিবাসন নিয়ে গবেষণার কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, যেকোন সীমান্ত এলাকা যেখানে পারাপারটা তুলনামূলক সহজ সেখানে অনিয়মিত অভিবাসনের সাথে সাথে মানবপাচারের বিষয়টিও ঘটে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে যে, যেসব কারণে মানব পাচার হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে উন্নত জীবনের আশায় এবং আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রলোভনে। প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক কারণে পাচারের শিকার হন।
সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাবাসন করে ফেরত পাঠানো হয়েছে সৌদি আরব থেকে। এরপরে ওমান থেকে এবং ভারত থেকেও ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মিজ সুলতানা বলেন, ভাল চাকরীর প্রলোভনে যারা মানবপাচারের শিকার হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা জানে না যে তারা আসলে পাচারের শিকার হচ্ছে। আর পাচারকারীরা তাদেরকে না বলে বিদেশ নিয়ে তাদের বিক্রি করে দেয়।
যেসব বিষয় মানবপাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক কারণ, অন্তরঙ্গ সঙ্গী যে কিনা মানবপাচারকারী, অভিবাসনের প্রলোভন, শিক্ষা এবং বিদেশি ভাষা জানার অভাব, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যাযুক্ত পরিবারের সদস্য হওয়া, বাবা-মায়ের যত্ন না পাওয়া শিশু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
‘ট্রাফিকিং ইন পার্সন্স ইন বাংলাদেশ’ নামে প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা মানবপাচারে যুক্ত থাকে, তারা আসলে অন্য কাজের তুলনায় এ কাজে বেশি অর্থ আয় সম্ভব হয় বলে এই অপরাধের সাথে জড়ায়।
তাদের হিসাবে, প্রতিটি মানবপাচারের জন্য একজন পাচারকারী ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করে থাকে যা প্রচলিত পেশার তুলনায় অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩০ টি মানবপাচারের ঘটনা জানা গেছে। এছাড়া ২০১৭ সালে ৭৭৮টি এবং ২০১৮ সালে ৫৬১ টি মানবপাচারের ঘটনা জানা যায়।