শনিবার দিরাইয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে আবারো দু’পক্ষে উত্তেজনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:৪৫:২১ অপরাহ্ন
দিরাই প্রতিনিধি: দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তাকে অবজ্ঞা করে বার বার দলীয় সভা সমাবেশ হচ্ছে তার নির্বাচনী এলাকায়। সভা সমাবেশগুলোতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হতে দেখা যায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুটসহ অনেককেই। প্রতিবারই এসব সভা সমাবেশ ঘিরে দুপক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজমান থাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীকে বাড়তি সতর্ক অবস্থান নিতেও দেখা যায়।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান উপেক্ষা করে গত ১৪ নভেম্বর দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুইপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। মূলত বিগত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি আলাদা বলয় তৈরী হয়। দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়ার নেতৃত্বাধীন এ বলয়টির মাধ্যমেই দলীয় কর্মসূচিসহ এ সকল সভা সমাবেশ হচ্ছে।
দশমবারের মতো দলীয় সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ২৮ জানুয়ারী শনিবার দিরাই থানা পয়েন্টে আরেকটি সমাবেশের ডাক দিয়েছে দিরাই উপজেলা যুবলীগ। এ সমাবেশেও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুটসহ অনেকেই উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে চলছে প্রচারণা। আগের মতোই শনিবারের সমাবেশকে ঘিরেও দুপক্ষের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের দুটি আলাদা বলয় তৈরী হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দুই প্রিয়ভাজনের মাঝে দ্ব›দ্ব দেখা দেয়। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়ার এই দলীয় দ্ব›েদ্বর প্রভাবে অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও দুই গ্রæপে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বিগত উপজেলা নির্বাচন ও পৌরসভার নির্বাচনে প্রকাশ্য বিরোধীতায় নামে দুই গ্রæপ। উপজেলা নির্বাচনে প্রদীপ রায় নৌকার প্রার্থী হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মঞ্জুর আলম চৌধুরী। এরপর জয়া সেনগুপ্তা বলয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়ের নেতৃত্বে একটি ও দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়ার নেতৃত্বাধীন অপর বলয়ের মাধ্যমেই দলীয় নানা কর্মসূচিসহ এসকল সভা সমাবেশ হয়ে আসছে।
গত ১৪ নভেম্বর দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুইপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় দুই পক্ষই মামলায় জড়িয়ে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার আতঙ্কে দীর্ঘদিন পলাতক থাকেন। মামলায় জামিনে এসে আবারো তাদের বিরোধ বাড়তে থাকে। সংঘর্ষের দুদিন পর কামাল উদ্দিনকে সভাপতি ও প্রদীপ রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি মেনে নেয়নি জয়া সেন বলয়ের অনেক নেতাকর্মী। তারাও পরে যোগ দেন মোশাররফ বলয়ে। মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানায় মোশাররফ বলয়। ফেইসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এমনকি দুই সদস্যের এ কমিটি বাতিল করতে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবী জানান। এসব ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হিসেবে শনিবারের সমাবেশ আহবান করেছেন বলে মনে করছেন আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতা কর্মীরা। এ সমাবেশ কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে চাপা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে জয়া সেন বলয়ের নেতারা শনিবারের সমাবেশের অনুমতি না দিতে প্রশাসনের কাছে ও জেলা আওয়ামীলীগের কাছে দাবী করে লাভবান হতে পারেননি। অপরদিকে মোশাররফ বলয়ের নেতারা প্রথমে আওমীলীগের নামে সমাবেশ করতে চাইলেও পরে উপজেলা যুবলীগের ব্যানারে সমাবেশটি করছেন বলে জানা গেছে। গত দুই দিন ধরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়ের নামে সমাবেশ করার প্রচারণা চলতে থাকে। শনিবারের সমাবেশ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, সম্মেলনে বিশৃংখলা করার দায়ে যাদেরকে বহিষ্কার করলেন জেলা সভাপতি তাদের মাধ্যমে দলের ব্যানারে কোন সভা সমাবেশে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। যদি এরকম কিছু হয় তাহলে দলীয় রাজনীতির নামে অপরাজনীতি হবে। এ বিষয়ে সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দশম বারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আমরা সমাবেশ করছি, আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ের লক্ষ্যে ও আওয়ামীলীগের উন্নয়নের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতেই এ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দিরাই থানা অফিসার ইনচার্জ কাজি মোক্তাদির হোসেন বলেন, সমাবেশের দিন আইন শৃংখলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে।