বিপিএল রঙে রঙিন সিলেট : হারে ম্লান উৎসবের আবহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:৩৪:২৩ অপরাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার : বিপিএলের রঙ পুরোটা ছড়ায়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্বে। কিন্তু সিলেটের চিত্র পুরোটাই উল্টো। সিলেট স্টাইকার্সের গোলাপী রঙের সুরভীতে বিপিএলের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে সিলেট।
বিপিএলে এমন কিছু আগে দেখা যায়নি কখনও কোনো মাঠেই। হাতে হাতে পতাকা, প্ল্যাকার্ড, কণ্ঠে চিৎকার আর স্লোগান। কিন্ত সিলেটের পরাজয়ে ভাটা পড়ে গেল সেই আবহে।
বিপিএলের কোনো দলের জন্য এমন একতরফা সমর্থন শেষ কবে দেখা গিয়েছিল, সেটা গবেষণার বিষয়। রংপুর রাইডার্সের একটা ব্যানার ছাড়া গ্যালারির সবখানেই যে সিলেটের দাপট! কিন্তু ২২ গজের গল্পটা ছিল অন্যরকম। নিজেদের ‘হাউসফুল’ দর্শকের সামনে এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বাজে ব্যাটিংটাই করল মাশরাফির দল। রংপুরের দুই নতুন বলের বোলার শেখ মেহেদী হাসান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইর বোলিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে সিলেট। স্কোরবোর্ডে ১৮ রান তুলতেই ৭ উইকেট নেই বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দলটির! বিপিএলের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড (৪৪) না হয়ে যায়। কিন্তু হলো না।
সেখান থেকে সিলেটেরই ঘরের ছেলে তানজিম হাসানকে নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি প্রতিরোধ গড়েন। ৪১ রান করেন তানজিম, মাশরাফি করেছেন ২১। আর তাতেই পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ৯২ করে সিলেট। যা ১৫.৪ ওভারে ৬ উইকেট হাতে রেখে টপকে যায় রংপুর।
পরশু সিলেটের এই ম্যাচের উইকেট দেখে বড় স্কোরের সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। বল কিছুটা থেমে আসবে, বাঁক খাবে এমনই ছিল মাশরাফির ধারণা। তবে সেটা যে ১৮ রানে ৭ উইকেট হারানোর মতো নয়, রংপুরের রান তাড়ায় তা বোঝা গেছে। সিলেটের ছোট্ট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রংপুরের ওপেনার রনি তালুকদার খেলেছেন স্বাভাবিক গতিতে। তাঁর ৩৮ বলে ৪১ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত সহজেই জিতেছে দলটি। ২টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল রনির ইনিংসে। মাঠ ভর্তি সিলেটের সমর্থকদের সামনে জয়ের পর রংপুরের ক্রিকেটার ও ম্যানেজমেন্টে সদস্যরা সিলেট স্টেডিয়ামে আসা সমর্থকদের অভিবাদনের জবাব দিয়েছেন।
ক্ষতি যা হওয়ার তা অবশ্য সিলেটের ইনিংসের প্রথম ৮ ওভারেই হয়েছে। রংপুরের আফগানি পেসার ওমরজাই নতুন বলটা সুইং করিয়েছেন দুই দিকে। আর মেহেদী পেয়েছেন বাঁক ও বাউন্স। সিলেটের টপঅর্ডার সে সময়টা রয়েসয়ে খেলেনি। দুই ওপেনার টম মুরস ও নাজমুল হোসেন ব্যাট আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন কঠিন কন্ডিশনেও। দুজন উইকেটও হারিয়েছে সে চেষ্টায়। তৌহিদ হৃদয়ও ওমরজাইর বলে শাফল করে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু হন। সিলেট বড় ধাক্কাটা খায় মুশফিকের বিদায়ে। চতুর্থ ওভারে হৃদয়কে আউট করার পরের বলেই গুড লেংথ থেকে ভেতরে আসা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে মুশফিককে বোল্ড করেন ওমরজাই। আরেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান জাকির হাসানের ইনিংসও দীর্ঘ হয়নি। জাকিরের বিদায়ে পাওয়ার প্লেতে বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৫ উইকেট হারায় সিলেট, দলের রান তখন মাত্র ১৬।
রংপুরের দুই ফাস্ট বোলার হারিস রউফ ও হাসান মাহমুদ এসে সিলেটের ক্ষতটা আরও গভীর করেন। দুজনই তাদের প্রথম ওভারে সিলেটের শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান থিসারা পেরেরা ও ইমাদ ওয়াসিমকে আউট করেন। সিলেট তখন বিপিএলের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় । সেটি দূর করেন তানজিম। রউফের গতি ও বাউন্স সামলাতে হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের এই পেসারকে। রউফের একটি বল তানজিমের মাথায়ও আঘাত করেছিল। সে রউফের পরের বলেই বাউন্ডারি মারেন তানজিম। সেটি দেখে রউফের বাহবাও পান এই তরুণ। মাশরাফির সঙ্গে ৪২ বল খেলে ৪৮ রান যোগ করেন তিনি। হাসানের ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে তানজিমের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ বলে ৪১ রান, ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। মাশরাফি ২১ বলে ২১ রান করেন। সিলেটের স্কোরকার্ডে এই দুজনই রানটাকে দুই অঙ্কের ঘরে নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ৯২/৯ (শান্ত ৯, মুরস ২, হৃদয় ০, জাকির ০, মুশফিক ০, ইমাদ ১, পেরেরা ৩, তানজিম ৪১, মাশরাফি ২১, আমির ৩*, রাজা ২; মেহেদি ৪-০-১২-২, ওমারজাই ৪-১-১৭-৩, রউফ ৪-০-১৯-১, হাসান ৪-০-১২-৩, নাওয়াজ ২-০-১৭-০, রবিউল ২-০-১২-০)।
রংপুর রাইডার্স: ১৫.৪ ওভারে ৯৩/৪ (নাঈম ১৮, রনি ৪১, মেহেদি ৮, মালিক ০, ওমারজাই ৪, নাওয়াজ ১৮; আমির ৪-০-২৬-১, ইমাদ ৪-০-১৯-০, তানজিম ১-০-৪-০, রাজা ৩.৪-০-২৩-১, মাশরাফি ৩-০-১৮-২)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আজমতউল্লাহ ওমারজাই।