সিলেটে ‘ক্রিকেট বসন্ত’, তবু অবহেলা!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ৩:৩০:৫৪ অপরাহ্ন
আহবাব মোস্তফা খান :
প্রকৃতিতে শীতের বিদায়লগ্ন চলছে। ঠান্ডা আগের মতো অনুভূত হচ্ছে না। বেলা যত বাড়ছে, উষ্ণতাও বাড়ছে বেশ। সহাস্যে উঁকি দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। কিন্তু সিলেটে যেন এবার একটু আগে-ভাগেই ‘বসন্ত’ শুরু হলো। তবে এটা ঋতুরাজ বসন্ত নয়, ‘ক্রিকেট বসন্ত’!
শীতের শেষ লগ্নে বিপিএলকে ঘিরে সিলেটে যেন ক্রিকেট বসন্তের সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে। অন্য ভেন্যুগুলো যেখানে দর্শকের জন্য ধুঁকেছে, সেখানে সিলেটে অন্যরকম এক চিত্র। যেদিকে চোখ যায়, কেবল দর্শক আর দর্শক। ঠাঁই নেই অবস্থা কয়েক কিলোমিটার জুড়ে।
প্রথম দিন দেখা গিয়েছিলো দর্শকে টাইটুম্বুর। দ্বিতীয় দিনও একই চিত্র। কিন্তু তৃতীয় দিন গতকাল যা দেখা গেলো-তা বর্ণনাতীত, কল্পনাতীত। আম্বরখানা থেকে লাক্কাতুরাস্থ সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে। এই ৪ কিলোমিটারের পুরোটা জায়গাজুড়ে মানুষের স্রোত। পায়ে হেঁটে, সিএনজি অটোরিকশায়, মটরবাইকে-যে যেভাবে পারছেন মাঠের গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টায়। এদের মাঝে কিশোর-তরুণ কেবল নয়, দেখা গেছে অগণিত কিশোরী-তরুণী ও বয়স্কদেরও।
পড়ন্ত বিকেলে মাঠমুখী এমন স্রোত দেখে বিস্মিত সিলেটের বাইরে থেকে আসা অনেকে। সাংবাদিক-বিসিবি কর্মকর্তাদেরও বিস্ময়ভরা চোখ জনস্রোতের দিকে। ঢাকা থেকে আসা বিসিবির এক কর্মকর্তা বললেন, সিলেটে যেন ‘ক্রিকেটের বসন্ত চলছে’। বিপিএলের পুরোটা সিলেটেই হওয়া উচিত। কেন এখানে সবচেয়ে কম ম্যাচ। এমনকি আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোর মূল ভেন্যু হওয়া উচিত এই সিলেট। কারণ এখানে এখন সব সুবিধা আছে। বিমানবন্দর, ভেন্যুর অবস্থান, পাঁচ তারকা হোটেল, রিসোর্ট সবই আছে। রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের জমজ আরেকটি মাঠ। প্রায় ৫ মিনিটের আলাপে তিনি তার নাম প্রকাশে অপারগতার কথা জানান।
দু’দিন আগে ঢাকার উদিয়মান এক ক্রীড়া সাংবাদিকও সিলেটকে নিয়ে তার আক্ষেপের গল্প শুনালেন। তিনি বললেন, সিলেটে মাঠ, অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা সবাই আছে। কিন্তু সিলেটে নিয়মিত হয়না আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়মিত হয়না-তা একটি বড় প্রশ্ন।
অথচ সিলেট আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ২০১৪ সালের নারী টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ, ২০১৮ সালে ১১৬তম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে মর্যাদা লাভের পর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে একটি টেস্টসহ অনেক ম্যাচ এখানে সফলভাবে হয়েছে। বিভিন্ন সময় সিলেটের মাঠ, আতিথেয়তায় মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেছেন দেশী-বিদেশী খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা।
তবুও সিলেটকে নিয়ে অবহেলার শেষ নেই বিসিবি’র। ২০২০ সালের মার্চের পর এই ভেন্যুতে হয়নি আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তানসহ বড় দলগুলোর খেলা এখানে নেই বললেই চলে। আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসতে যাওয়া ইংল্যান্ড দলেরও এখানে কোন ম্যাচ নেই।
ইংল্যান্ড না-কি এখানে খেলতে রাজী হয়নি, এমন খবর রটেছে সর্বত্র। একটি গণমাধ্যমের কাছে বিসিবি পরিচালক আকরাম খান জানিয়েছেন, নানা কারণে সিলেটে খেলতে সম্মত হয়নি ইংল্যান্ড। অথচ এমন কোন কথাই না-কি বলেনি ইংল্যান্ড।
তবে আকরাম খানের সেই মন্তব্যের সেই প্রসঙ্গে নিজের হতাশা ও অসন্তোষ গোপন করতে পারেন নি অপর বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ইংল্যান্ডের এখানে আসতে না চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যিনি বলেছেন, তিনি জানেন। আমি মনে করি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিলেটের যে সম্পর্কটা এবং ইংল্যান্ড দলে যারা খেলেন, তাদের কিন্তু সিলেটে খেলার ব্যাপারে আগ্রহ আছে। এখানে যে সুযোগ-সুবিধা আছে সেটা তো অন্য জায়গায় এভাবে নেই। তারা আসতে চাইবে না, এটা আমি জানি না আসলে।
ক্রিকেটারদের আবাসন নিয়ে সমস্যা কেটে গেলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ না পাওয়ায় নাদেলের কণ্ঠে শোনা যায় তির্যক মন্তব্য, এখন হয়তো আমাদের সেভেন স্টার খুঁজতে হবে। ফাইভ স্টার তো হয়ে গেছে।
বিসিবির পরিচালক হয়েও অসহায়ত্ব ফুটে উঠল নাদেলের কণ্ঠে। তিনি বিসিবির সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করলেন সিলেটে আরও বেশি ম্যাচ দিতে।
এমন হতাশামাখা অবস্থার মাঝে গতকাল সোমবার খেলা দেখতে সিলেট এলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার আগমন ঘিরে নতুন করে সাজে স্টেডিয়াম। মূল ফটকসহ বেশ কিছু জায়গায় তার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলতে দেখা যায়। গ্যালারিতে যখন নেই তিল ধারণের জায়গা, সেখানে ভিআইপি বক্সের শূন্যতাও ঘুচেছে কাল। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, তার আগমনে হয়তো আন্তর্জাতিক ম্যাচের শূন্যতাও এবার ঘুচবে সিলেটের।