মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতেও ফের বাড়লো বিদ্যুতের দাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৫:০১:৫৮ অপরাহ্ন
১৯ দিনের মাথায় ২ বার
জালালাবাদ রিপোর্ট : মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মাঝে আবার খুচরা এবং পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলো সরকার। আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন মূল্য কার্যকর হবে। এর আগে ১২ জানুয়ারি খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম পাঁচ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। অর্থাৎ ১৯ দিনের মাথায় ফের বাড়লো বিদ্যুতের দাম।
নতুন ঘোষণায় ফেব্রুয়ারি মাসেও আবাসিক এবং শিল্প-কলকারখানায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে অন্তত পাঁচ শতাংশ। আর পাইকারিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ছে অন্তত আট শতাংশ।
সরকার এর আগেই আভাস দিয়েছিল যে, এখন থেকে প্রতিমাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় হতে পারে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সাথে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের একটি প্রক্রিয়া চলছে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু পহেলা ডিসেম্বর থেকে সেই আইনে সংশোধন এনেছে। এরপর বিদ্যুতের দামের পর শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে।
গ্যাসের পর এবার সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে নভেম্বর মাসেও বিদ্যুতের পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল, যা ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারোদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম এমন সময় বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে সাধারণ মানুষ এমনিতেই সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে বাড়তি কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও গত মে মাস থেকে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ টাকায় ওঠায় সব আমদানি পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়েছে, যা বাড়িয়ে দিয়েছে নিত্যপণ্যের দাম।
এদিকে, বিদ্যুতের দাম বাড়ার খবরে চরম হতাশা প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরপরই জানতে চান কত বাড়ছে, মাসে বিল কত আসবে ইত্যাদি।
নিত্যপণ্যের চড়া দামের পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে হতাশার শেষ নেই সাধারণ মানুষের। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। শিবগঞ্জের বাসিন্দা এক চাকুরীজীবী এমনই একজন। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসারের টানাটানির কথা জানাতে গিয়ে বললেন, অবিশ্বাস্য হাহাকার চলছে। বাজারে গেলেই চোখে পানি আসে। সবকিছুর দাম শুধু বাড়ছেই। দিশাহারা হয়ে যাচ্ছি। কোনো কূল পাচ্ছি না।
এখন পরিবার চালানোর খরচ বাড়লেও বিপরীতে রোজগার এক টাকাও বাড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, এত বেশি খরচ বেড়েছে যে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি।
সব মিলিয়ে সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এর আগে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। গ্যাসের দাম গত জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ১৮ জানুয়ারি তা রেকর্ড ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়।