যেসব শর্তে আইএমএফ’র ঋণের ১ম কিস্তি পেল বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:৪১:২১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : অনুমোদনের ৩ দিনের মাথায় ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে বুধবার রাতে আইএমএফের ছাড় করা অর্থ জমা হয়েছে। এর পরপরই বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফের মধ্যে এই ঋণ বিষয়ে হওয়া সমঝোতা স্মারকের সব নথি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেখানেই ঋণের সব শর্ত তুলে ধরা হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের চুক্তির নথি এর আগে প্রকাশ করেনি তারা। সরকারের সম্মতিতে এবারই প্রথম প্রকাশ করা হলো। ৬ কিস্তির এই ঋণের দ্বিতীয়টি পরিশোধ হবে ৭ মাস পরে। এজন্য আগামী জুলাই মাসের আগে সরকারকে বেশ কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানিয়েছেন, আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় করেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ৩ হাজার ২৬৯ কোটি (৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন) ডলার। ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের বাকি অর্থ ছাড় হবে শর্তপূরণ সাপেক্ষে ৬ কিস্তিতে। প্রতি কিস্তির পরিমাণ ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর্থিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের শর্ত ও বাজারভিত্তিক সুদে এই ঋণ নিল সরকার। এর সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের বোর্ড বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। সংস্থাটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এক্সটেন্ডেন্ট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা সম্প্রসারিত ঋণ সুবিধার আওতায় তারা ৩৩০ কোটি ডলার দেবে। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১৪০ কোটি ডলার অনুমোদন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই আরএসএফ তহবিলের ঋণ পাচ্ছে। স্বল্প ও মধ্য আয়ের যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের জন্য এ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
আইএমএফ সাধারণত কোনো দেশকে ঋণ দিলে বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে সম্মত হয়েই দেয় এবং সাধারণত দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে সেই সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশকে দেওয়া সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।
জানা গেছে, ঋণের কিস্তি খুব কম হলেও আইএমএফের ঋণ পেলে অন্য সংস্থাগুলোর ঋণ পাওয়া সহজ হবে। এ কারণে সরকার আইএমএফের ঋণ দেওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ঋণের টাকা দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।
যে কারণে আইএমএফের ঋণ পেতে কঠোর সংস্কারের শর্ত মেনে নিয়েছে সরকার। রাজস্ব সংগ্রহ, সরকারের ব্যয়, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি, বিনিময় হার ও আর্থিক খাতের নীতিতে এ বছরই ব্যাপক সংস্কার করতে হবে সরকারকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আগেই রাজস্ব ও ব্যাংক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিতে হবে আরও কিছু সংস্কার উদ্যোগ।
সংস্কার কাজের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর উদ্যোগ। আগামী জুনের মধ্যে কর জিডিপি অনুপাত সরকারকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে বা বাড়ানোর উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে, যা আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট উইংয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করতে হবে।
সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ নেওয়া কমানোরও শর্ত রয়েছে আইএমএফের। আইএমএফ বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া ঋণ কমিয়ে চার ভাগের এক ভাগে নিয়ে আসতে হবে। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম নির্ধারণে সময় নির্দিষ্ট পদ্ধতি চালু করতে হবে।
আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদহারের করিডোর পদ্ধতিতে যেতে হবে। একইভাবে জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে রিজার্ভের হিসাব শুরু করতে হবে। একই সময়ের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার করতে হবে বাজারভিত্তিক।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করতে হবে।
এই জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে ঝুঁকিভিত্তিক সুপারভিশনে যেতে বলেছে আইএমএফ। একই সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।