সিলেটে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী নিয়ে মাঠে আ’লীগ-বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:১০:২৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। দীর্ঘ ৫ বছর পর একই দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বৃহৎ বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির কর্মসূচীকে ঘিরে রয়েছে উত্তেজনা। কারণ শেষ পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি।
যদিও প্রথমে একই স্থানে একইসময়ে দুই দল সমাবেশের ঘোষণা দেয়, তবে পরবর্তীতে স্থান বদলে করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবুও দুই দলের এই মুখোমুখি অবস্থান নগরজুড়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
জানা গেছে, আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) রেজিষ্টারী মাঠে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। গত ২৫ জানুয়ারী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচী ঘোষণা করেন। বিভাগীয় সমাবেশ সফলে টানা এক সপ্তাহ ধরে সিলেট জেলার উপজেলা ও নগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রচারনা চালিয়ে আসছে দলটি। তবে গত বুধবার (২৮ জানুয়ারী) রাতে বিএনপি সমাবশের দিনই নগরে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দেয় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।
বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপির সমাবেশস্থল রেজিষ্টারি মাঠেই হবে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ‘অপর আরেকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী থাকায়’ আওয়ামী লীগের সমাবেশ রেজিস্টারি মাঠের বদলে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সমাবেশ বাধাগ্রস্থ করতে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতেই একইদিনে কর্মসূচী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তবে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, কারো কর্মসূচীতে বাধা দেওয়া নয়, বরং রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার প্রতিবাদেই শান্তি মিছিল করবে আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওই স্থানে বিএনপির সমাবেশ থাকায় সংঘাত এড়াতে শেষ মূহূর্তে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
এদিকে ‘গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার’সহ ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার বেলা ২ টায় রেজিস্টারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হবে। অপরদিকে সিলেট কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শুরু হবে বেলা ৩ টায়।
বিএনপি নেতারা জানান, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত জানুয়ারিতেই সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে সমাবেশের স্থান নির্বাচন শেষে বিষয়টি মহানগর পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে অবহিতও করা হয়েছে। সমাবেশ সফলে দলটির নেতা-কর্মীরা ব্যাপক তৎপর রয়েছেন। নগর ও উপজেলাগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, শনিবারের বিভাগীয় সমাবেশ সফলে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এই সমাবেশে শুধু দলীয় নেতাকর্মীরাই নয়, সিলেটের সাধারণ জনতা অংশ নিতে অপেক্ষা করছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সেলিমা রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশ বানচালে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তারা ১৯ নভেম্বরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের সমাবেশ বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট করেছে। এবার রেজিস্টারি মাঠের সমাবেশ বানচাল করতে পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আমাদের পূর্বঘোষিত সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। রেজিস্টারি মাঠের সমাবেশ বানচালের ষড়যন্ত্র হলে সিলেটবাসীকে সাথে নিয়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত।
তবে একইদিনের কর্মসূচীকে পাল্টা কর্মসূচী বলতে নারাজ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমাদের কর্মসূচী কেন্দ্রঘোষিত। আমাদের সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক।
তিনি বলেন, আমরা প্রথমে রেজিস্টারি মাঠে সমাবেশ আহ্বান করেছিলাম। যখন শুনেছি বিএনপির সমাবেশ আছে পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে গেছি। সিলেট হচ্ছে রাজনৈতিক সম্প্রীতির নগরী। তাই আমরা বিএনপির জন্য রেজিস্টারি মাঠ ছেড়ে দিয়েছি। এই সম্প্রীতিকে যদি বিএনপি পাল্টা হিসেবে দেখে তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, একই দিনে বড় দুই দলের কর্মসূচির কারণে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। ইতোমধ্যে আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করার জন্য নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি।