মানুষকে অভুক্ত রেখে সরকার উন্নয়নের গান গাইছে- সিলেটের সমাবেশে সেলিমা রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৭:২৬:৩৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ-গ্যাস নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগনের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখন ঠিকমতো দুমুঠো ভাত খেতে পারছেনা। সরকার মানুষকে অভুক্ত রেখে উন্নয়নের গান গাইছে। অথচ জাতীয় উন্নয়ন মানে জনগনের উন্নয়ন। তবে এই সরকার জনগনের কোন উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগের কোন রাজনীতি নেই। তাদের আছে দখল আর লুটপাট। এসব করে তারা আবার দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। এই সরকারের হাত থেকে জনগন মুক্তি চায়। তাই তারা রাজপথে নেমেছে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা।
তিনি শনিবার বিকেলে সিলেট নগরীর রেজিস্টারি মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি আরো বলেন, এখন মধ্যবিত্তরা গরীব হচ্ছে। গরীব আরো গরীব হচ্ছে। তারা খেতে পারছে না। অপুষ্টি বাড়ছে। অথচ এমন সময়েও একদল কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে। হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এই লুটেরা গোষ্টির কাছ থেকে জনগনকে মুক্ত করতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী আরো বলেন, দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোন মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি, ভোটকেন্দ্রে কুকুর শুয়েছিল। তাই এই নির্বাচনকে মানুষ কুত্তা মার্কা নির্বাচন বলে। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতেই শেষ হয়ে যায়। এই সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। বিএনপি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশ করছে। এই দাবী শুধু বিএনপির একার নয়, এটি জনগনের দাবী। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা দখল, লুন্ঠন, দুর্নীতিতে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের ইতিহাস দেশবাসী জানে, এই ইতিহাস পরিবর্তন করা যাবে না। তাই দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদের যৌথ পরিচালনায় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবীতে সিলেটে বিভাগীয় বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. মোঃ এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমান, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জিকে গৌছ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সহ স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, হাদিয়া চৌধুুরী মুন্নী ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
শনিবার দুপুর থেকেই সিলেট বিভাগীয় সমাবেশের জনসমাগম রেজিষ্ট্রারী মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে নগরীর তালতলা থেকে শুরু হয়ে সুরমা পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সভায় সিলেট জেলার সকল উপজেলা-পৌরসভা এবং সিলেট মহানগরের সকল ওয়ার্ড থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা যোগদান করেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সাবেক সংসদ সদস্য নাজির হোসেন, সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হুমায়ুন কবির শাহীন, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, এডভোকেট হাবিবুর রহমান, বিএনপি নেতা এডভোকেট আবেদ রাজা, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মামুনুর রশীদ (চাকসু) প্রমূখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, বর্তমান সরকার জগদ্দল পাথরের মতো আমাদের উপর চেপে বসেছে। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করেছে। তাদের দুর্নীতির খেসারত দিচ্ছে জনগন। বিদ্যুৎ সহ সবকিছুর দাম দফায় দফায় বাড়ছে। না খেয়ে মরার চেয়ে পুলিশের গুলি খেয়ে মরা অনেক সম্মানের। তাই জনগনকে এই সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদ, আনসার সহ শত-শত নেতাকর্মীদের গুম করে রেখেছে। এখন তারা বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া ছাড়া আর তাদের কোন কাজ নাই। এই সরকারই শেষ সরকার নয়, প্রশাসনের যারা জনগনের সাথে শত্রুতার আচরণ করছে তাদের কিন্তু দেশেই থাকতে হবে। নির্দেশদাতারা পালিয়ে যাবে, আপনারা পালাতে পারবেন না।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সরকারকে বিদায় করতে না পারলে রাষ্ট্র মেরামত করা যাবে না। এজন্য বিএনপির ১০ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হলে হায়েনাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। সরকার যদি গণতন্ত্রের ভাষা না বুঝে তাইলে দেশে শ্রীলংকার মতো অবস্থা হবে।
যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সুহেল বলেন, আমরা যখন এইখানে সমাবেশ করছি তখন সিলেটে আরেকটি সমাবেশ হচ্ছে। পিস্তল রাইফেল বন্দুক নিয়ে শান্তি সমাবেশ করা হচ্ছে। আমাদের চুলকানি দেয়ার জন্যই একইদিনে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই সরকার যদি আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে দেশের মানুষ আর বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই জোর করে ক্ষমতা আকড়ে থাকা এই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ট। বিএনপি যখন সমাবেশ করে আওয়ামীলীগ তখন পাহারা দিতে ব্যস্ত থাকে। তাই এই পাহারা পার্টিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।