ক্যান্সার দিবস পালন : সিলেটে নেই ক্যান্সারের বিশেষায়িত ল্যাব
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৫১:৫১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ‘আসুন ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য কমিয়ে আনি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সিলেটে নানা আয়োজনে বিশ^ ক্যান্সার দিবস পালিত হয়েছে।
এসব কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে সিলেট বিভাগে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বেশি। এর কারণ পান-জর্দা। তারা বলেন, সিলেট অঞ্চলে ক্যান্সার চিকিৎসকদের অভাব প্রকট।
বক্তারা বলেন, বিশে^র সব দেশেই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় সরকারিভাবে। তাছাড়া এ সেবায় বিশেষায়িত ল্যাব অবশ্য প্রয়োজন। কিন্তু এটি সিলেটে নেই। রয়েছে শুধু ঢাকায়। এটা শীঘ্রই সরকারি বা বেসরকারিভাবে স্থাপন প্রয়োজন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : শনিবার সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের উদ্যোগে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কলেজ অডিটোরিয়ামের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালি পরবর্তী কলেজ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. এস্তেফছার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার বনিউল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি ক্যান্সার প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সচেতনতা ও পারিবারিক জীবনযাপন ও খ্যদ্যভাসে প্রতি যত্নবান হলে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তা হলে দেরি না করে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে জীবন বাঁচানো সহজ হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা. মিজানুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি বিভাগ। বিশেষ অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী, উপ-পরিচালক ।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন নাক, কান, গলা রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ কামাল, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আজিজুর রহমান, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আহমেদ, শিশু রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানজিলা চৌধুরী ও গাইনি বিভাগের রেজিষ্ট্রার ডা. ইভানা বেগম, সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে. জেড আলম, শিশু রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মজিবুল হক সহ অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ।
নর্থ ইস্ট হাসপাতাল : বিশ^ ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুরে নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দিন দিন সিলেটের ক্যান্সার রোগীদের ব্যাপক আশা ও ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতালটির ক্যান্সার বিভাগে গত ৯ বছরে প্রায় ৬০ হাজার আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জীবনযাপন করছেন ৫ শতাধিক লোক।
মতবিনিময়কালে নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ পাটোয়ারি বলেন, নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালের কার্যক্রম ২০১৪ সাল থেকে শুরু হলেও অত্যাধুনিক রেডিও থেরাপি মেশিন নিয়ে আসা হয় ২০১৬ সালে। এরপর থেকে নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালের রেডিও থেরাপি মেশিন দ্বারা রেডিয়েশনের মাধ্যমে ইনডোর, আউটডোর, ডে-কেয়ার বিভাগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এখানে ইনডোরে ১৮ হাজার ৭৪৪, ডে-কেয়ারে ২২ হাজার ৬৬৩ ও আইটডোরে ১৭ হাজার ২৯ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালে ৬৩টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার কেবিন, ডে-কেয়ার ও ইনফেকশন ইউনিট বা আইসোলেশন ওয়ার্ড।
ডা. দেবাশীষ পাটোয়ারি জানান, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৪২৪ জন রেডিও থেরাপি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৬৬৫ জন, মারা গেছেন ৬৬৪ জন, আর বাকিদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আক্রান্তদের অত্যাধুনিক থ্রিডি, সিআরটি, আএইমআরটি, র্যাপিড আর এবং ভিমেক পদ্ধতিতে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। গরিব রোগীদের ২৫ ভাগ কম মূল্যে দেওয়া হয় চিকিৎসাসেবা।
নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মোখলেছ উদ্দিন বলেন- দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে সিলেট বিভাগে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বেশি। এর কারণ পান-জর্দা। তিনি বলেন- সিলেট অঞ্চলে ক্যান্সার চিকিৎসকদের অভাব প্রকট। সেটা দূর করতে চেষ্টা চালাচ্ছে নর্থ ইস্ট হাসপাতাল। তিনি বলেন, বিশে^র সব দেশেই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় সরকারিভাবে। তাছাড়া এ সেবায় বিশেষায়িত ল্যাব অবশ্য প্রয়োজন। কিন্তু এটি সিলেটে নেই। রয়েছে শুধু ঢাকায়। এটা শীঘ্রই সরকারি বা বেসরকারিভাবে স্থাপন প্রয়োজন।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন- চিকিৎসাসেবায় জনশক্তি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ। এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সেবায় হাসপাতালটি নিয়েছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। সবমিলিয়ে বলা যায়, ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় বৃহত্তর সিলেটবাসীর জন্য একটি ভরসা ও স্বস্তির জায়গা নর্থ ইস্ট হাসপাতাল।
হাসপাতালটির এ সেবাকে আরও ব্যাপৃত করতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতার প্রয়োজন বলে জানান ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী।
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন নর্থ ইস্ট ক্যান্সার হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তৈমুর হোসেন তালুকদার ও সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌহিদ উর রশিদ চৌধুরী।
এদিকে, বিশ^ ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় নর্থ ইস্ট হাসপাতালে র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।