পিকনিক ও বিয়ের মাসে মাংস ও ডিমের দামে ঝড়ো গতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:০৩:০৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: জানুয়ারির হাড়কাঁপানো শীত ফেব্রুয়ারিতে এসে অনেকটা কমে যায়। রাস্তাঘাট থাকে শুকনো, নেই বৃষ্টি বাদলার বিড়ম্বনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি কার্যক্রম ও ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক আয়োজনও ইতি টানে। বছরের শুরুর চাপ গুছিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজনও কোমর সোজা করেন এসময়। আর তাই ফেব্রুয়ারি মাস এখন অনেকের কাছেই পিকনিকের মাস হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে জাফলং, বিছনাকান্দি, সাদাপাথর, লালাখালের দিকে ছুটে চলে পিকনিকের বাসের সারি। তাছাড়া শীতকাল বিয়ের মৌসুম হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। মাঘের শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে এলেই শুরু হয় বিয়ের ধুম। বিয়ে বা পিকনিক মানেই অনেক লোকের একসাথে খাবার দাবারের ব্যাপার চলে আসে। এসব পিকনিকে পোলাও, বিরানি বা আখনিই প্রধান খাবার। আখনি কিংবা বিরানি যাই হোক মাংস ও ডিম ছাড়া চিন্তা করা যায় না। সাথে পোলাওয়ের চাল। আর এই তিন আইটেমেই এবার দাম বেড়েছে অনেক। পিকনিকের এই ভরা মৌসুমে মাংস ও ডিমের দাম যেন ঝড়ো গতিতে বেড়ে ব্রেকফেল অবস্থা। কোনো ভালো খবর নেই চালের বাজারেও।
বাজারের খবর নিয়ে দেখা গেছে সপ্তাহের ব্যবধানে মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ডিমের দাম বেড়ে ডজন ১শ ৪০ টাকা যা হালিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা করে। অপরদিকে, খুচরা পর্যায়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ টাকা করে বাড়িয়ে খোলা চিনি ১শ ৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১শ ১২ টাকা করা হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমলেও চায়না রসুনের দাম বেড়ে ৩শ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সবজি ও মাছের বাজার স্থিতিশীল দেখা গিয়েছে।
অনেকেই বলছেন পিকনিকসহ বিভিন্ন উৎসব জমে ওঠায় মাংস ও ডিমের দাম লাগামহীন হয়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুরগি ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের সপ্তাহের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১শ ৮০ থেকে ২শ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পাকিস্তানি ও লেয়ার মুরগির দামও ২শ ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২শ ০৮০ থেকে ৩শ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে দেশি মুরগি আগের মতোই ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে ডিমের ডজনেও ১৫ টাকা বেড়ে ১শ ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, চাহিদা বাড়লেও সেভাবে সরবরাহ বেশি হয়নি। তাই দাম বাড়ছে। অন্যদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকা কেজি এবং খাসি ১১শ টাকা।
তবে মাংসের দাম বাড়লেও রুই, কাতলা, ইলিশসহ প্রায় মাছ আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান রুই ও কাতলার কেজি ২শ ২০ থেকে ৪শ ৫০ টাকা, চিংড়ি ৫শ থেকে ১২শ টাকা কেজি, টেংরা, বোয়াল, আইড়ের দাম কমে ৫শ থেকে ৮শ টাকা, শিং ৪শ থেকে ৬শ, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া দেড়শো থেকে ২শ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে বেশি মাছের উৎপাদন হওয়ায় সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মাছ।
মাংসের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রসুনের দামও, কমেছে পেঁয়াজ। গত সপ্তাহে দেশি রসুনের কেজি ১শ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১শ ৩০ থেকে দেড়শো টাকা এবং চায়না রসুন ২শ ৮০ থেকে ৩শ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় এর দামও কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসয়ীরা জানান। দেশি আদার দাম আগের মতোই ১শ ১০ থেকে ১শ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে চায়না আদার দামও বেড়ে আড়াইশো থেকে ২শ ৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ১শ ৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১শ ১২ টাকা করা হলেও বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা জানান কোম্পানি থেকে চিনি দিচ্ছে না। তাই আমরা বিক্রি করছি না। তারা বলেন কোনো জিনিসের দাম বাড়ার ঘোষণা আসার সাথে সাথেই কোম্পানি মাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে নতুন দামে পণ্য বাজারে ছাড়ে।
তবে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দামের উর্ধ্বগতি থাকলেও এখনও স্থিতিশীল আছে সবজির বাজার। বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে টমেটো ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ২৫ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, মূলা ও পেঁেপ ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং শসা ও গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
মাংস ও ডিমের সাথে চালের বাজারেও কিছুটা তারতম্য দেখা গেছে। বস্তার চাল ৭২ টাকা বিক্রি করা হলেও তীর ও প্রাণ মিনিকেট চাল বেশি দামে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে রশিদসহ অন্যরা ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি বিক্রি করলেও তীর ও প্রাণ মিনিকেট ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি করছে।
এক বিক্রেতা জানান, ১০ কেজির তীর মিনিকেট ৭শ ৮০ টাকা ও ৫ কেজির প্রাণ মিনিকেট ৪শ ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, বাসমতি ৮৮, নাজিরশাইল ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পোলাও চালের ১শ ৩৫ থেকে ১শ ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। আর কোম্পানির প্যাকেট পোলাও চাল দেড়শো টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চালের দাম আর কমবে না। কারণ আমনের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। বোরো ধান উঠলে ২৮ ও মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমতে পারে।