হাজার কোটি টাকার ক্ষতির জন্য বিমানের জিএমসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৭:৪৭:২৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি পুরনো উড়োজাহাজ ইজারা নেওয়া এবং রি-ডেলিভারি পর্যন্ত ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও প্রধান প্রকৌশলীসহ ২৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১-এ সোমবার মামলাটি করেছেন সংস্থাটির উপপরিচালক জেসমিন আক্তার। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের মামলায় আসামি করা হয়েছে পরিচালক ফাইট অপারেশনস ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুর রহমান ফারুকী, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, দেবেশ চৌধুরী, সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কনসালট্যান্ট গোলাম সারওয়ার, প্রকৌশলী মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঞা, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী এআরএম কায়সার জামান, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, জিয়া আহমেদ, চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফাইট পার্সার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদ রহমান, ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার মো. জাহিদ হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক, ফাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিমান বাংলাদেশ গাজী মাহমুদ ইকবালকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ ইজারা নেয়া থেকে রি-ডেলিভারি পর্যন্ত বিমানের ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। মূলত আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হতে অসৎ উদ্দেশ্যে এটি করেন।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে জানান, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ দুটি ইজারা নেয় বিমান। প্রথম বছর শেষেই দুটি এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। ইঞ্জিনগুলো ১২-১৫ বছরের পুরনো এবং এর উড্ডয়নযোগ্যতার মেয়াদ কম থাকায় পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দুটি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও ভুল আর পক্ষপাতদুষ্ট চুক্তির কারণে ফেরত দেয়া সম্ভব হয়নি। বসিয়ে রেখে ভাড়া গুণতে হয়েছে। তাই উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় সেটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারো ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানি উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে। এতসব প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। পরে এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকেই অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগসংশ্লিষ্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর গত বছরের ২৮ মে চিঠি দিয়ে ইজারাসংক্রান্ত নথি তলব করে সরকারের এ সংস্থা। এরই মধ্যে এয়ারক্রাফট ইজারা নেয়ার প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগটি গভীরভাবে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদক উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও তৎকালীন সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারকে। উড়োজাহাজের ইজারা চুক্তি ও দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোনো দুর্বলতা আছে কিনা সেগুলোর অনুসন্ধান চালানো হয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় দুদক কার্যালয়ে ডেকে এনে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির নজির হচ্ছে এ চুক্তি, যার খেসারত হিসেবে রাষ্ট্রকে হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে অনায়াসেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যেত। উল্টো নানা রকম কারসাজি আর ফন্দিফিকিরের মাধ্যমে প্রায় প্রকাশ্যেই সিন্ডিকেট গঠন করে বিমানে কমিশন বাণিজ্যসহ নানা প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হচ্ছে।