বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ: দখল করছে কারখানা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:১৪:৪৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: আবহমান কাল ধরে গ্রামের কথা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে মাটির কাঁচা রাস্তা, ভোরে পাখির ডাক, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ঝিঁঝির ডাক আর শিয়ালের হুক্কাহুয়া ছাড়া কোনো জনমানবের আওয়াজ শোনা যেতো না। চারদিকে বিরাজ করতো অন্ধকার এক সুনসান নিরবতা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছে সিলেটের আশপাশের অঞ্চলগুলো কদিন আগেও ছিল এমন। মহাসড়ক দিয়ে রাতের বাসগুলো যখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলতো তখন গাড়ির হেড লাইটের আলো ছাড়া আর কোনো আলো আশপাশে চোখে পড়তো না। কিন্তু ঢাকা থেকে মহাসড়ক দিয়ে সিলেটে প্রবেশের সময় একসময়ের সেই গ্রামীণ চিত্র এখন একেবারে বদলে গিয়েছে। সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুর উপজেলার জগদিশপুর, নোয়াপাড়া, বেজুড়া, শাহপুর, বাঘাসুরা, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর, বিরামচর, উবাহাটা ও বাহুবল উপজেলার মিরপুর, নতুন বাজার ইত্যাদি গ্রামে এখন গড়ে উঠছে শতাধিক শিল্পকারখানা।
একসময় পাখির ডাকে যাদের ঘুম ভাঙতো এখন তাদের কারখানার কলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে। ধানের খেতের অনেক জায়গায় এখন বিঘার পর বিঘা জুড়ে স্থাপনা, অন্ধকার চিরে সন্ধ্যার পরই জ¦লে ওঠে ফ্যাশ লাইট।
এসব গ্রামগুলোতে এখন একের পর আধুনিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সহজলভ্যতা আর মহাসড়ক দিয়ে সহজে যোগাযোগের কারণে উদ্যোক্তারা বেছে নিয়েছেন পাহাড় ঘেষা এই জনপদকে। রেল অথবা সড়কযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাবার পথে মাধবপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার চত্ত্বর থেকে রাস্তার দুই দিকে তাকালে কেবল চোখে পড়বে নয়া নয়া শিল্প-কারখানা। যেন কোনো এক শিল্পনগরী!
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় শতাধিক শিল্প- কারাখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাধবপুর উপজেলায় ৬০টি শিল্প-কারাখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প-কারাখানার মধ্যে- স্কয়ার, হবিগঞ্জ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক (প্রাণ-আরএফএল), আকিজ গ্লাস, যুমনা ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক, টান্সকম গ্রুপ, চারু সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, আরএকে সিরামিক,বাদশা গ্রুপ, সিপি বাংলাদেশ, ষ্টার সিরামিক্স, তাসহিদ কটন মিলস, মেঘনা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ, বেঙ্গল গ্রুপ, মার কোম্পানী, এন জে গ্রুপ, চায়না-বাংলা সিরামিক, এজি সিরামিক, সায়হাম গ্রুপ, এফএসএল গ্রুপ, এস এম গ্রুপ, রাখিন গ্রুপ, কে-কো কেমিক্যাল, ম্যাটাডোর গ্রুপ, সেলিম গ্রুপ, এফএল গামের্ন্টস, টিকে গ্রুপ, রূপায়ন গ্রুপ উল্লেখ্যযোগ্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও এসব এলাকায় একটি গাড়ির আওয়াজ শোনা গেলে মানুষ বেড়িয়ে আসত দেখার জন্য। বছর সাতেক আগের এলাকার সাথে এখানকার তফাৎ আকাশ পাতাল। এখানে ক্রমেই বাড়ছে কলকারখানা; উৎপাদন হচ্ছে দেশীয় অনেক নতুন নতুন পণ্য। তৈরি হয়েছে হাজার হাজার লোকের কর্মক্ষেত্র। কারখানা হওয়ায় বেড়েছে জমির দাম। আগে এখানে জমি কেনার জন্য লোক পাওয়া যেত না কিন্তু এখন কোনো কোনো স্থানে দশ লাখ টাকা শতকেও জমি বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রাণ (আরএফএল) ইন্ডাষ্ট্রির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তৌহিদুল জামান বলেন হবিগঞ্জ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক নামে (প্রাণ-আরএফএল) ২০১৪ যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই পার্কে ৩৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছে।
স্কয়ার ডেনিম এবং স্পিনিং মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল বাবুল বলেন ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই এলাকায় শিল্প- কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে। শিল্প-কারখানা গড়ে উঠায় এলাকার লোকজনের কর্মসংস্থান যেমন সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি তাদের জীবন যাত্রার মানও উন্নত হচ্ছে। ২০১৭ সালে হবিগঞ্জ যাত্রা শুরু স্কয়ারের। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে ৮০ ভাগ স্থানীয় লোকজন।