এলপি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে নৈরাজ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১:০০:২০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে নতুন দামেও মিলছেনা (সিলিন্ডার) এলপি গ্যাস। রমজানকে সামনে রেখে ফের বাড়তে পারে গ্যাসের দাম। এমন আভাস থেকেই বড় বড় কোম্পানীগুলো বাজারে সিলিন্ডার গ্যাসের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরীর চেষ্টার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। চাহিদার অর্ধেক সিলিন্ডার পাচ্ছেন না বলেও জানান সিলেটের ব্যবসায়ীগণ। ফলে একদিকে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে তাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেক গ্রাহককে অতিরিক্ত দামে গ্যাস কিনতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারী থেকে দেশের অধিকাংশ এলপিজি আমদানীকারক কোম্পানী বাজারে সিলিন্ডার বিক্রি প্রায় বন্ধ করে দেয়। এই সময়ে তারা চাহিদার মাত্র ১০ থেকে ১৫ ভাগ সিলিন্ডার সরবরাহ করে। রমজানকে সামনে রেখে কোম্পানীগুলো সিলিন্ডার মজুত করার ফলে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দেয়। ২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আরেক দফা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে। যা ১ ফেব্রুয়ারী থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেয়। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বেড়ে দাড়ায় ১ হাজার ৪৯৮ টাকায়। কিন্তু এই দামেও বাজারে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি দরের চাইতেও ১০০/১৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে গ্যাস। দাম নিয়ে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।
জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে বসুন্ধরা, যমুনা, বেক্সিমকো, পেট্রোম্যাক্স, ইনডেক্স, বিএম, লাফস, টোটাল, ওমেরা, নাভানা, জেএমআই, ইউনিভার্সাল ও অরিওন কোম্পানীর এলপি গ্যাস সরবরাহ করছে। গত ৩ সপ্তাহ ধরে এলপি গ্যাসের বাজারে সঙ্কট চলছিলো। ২৬৬ টাকা দাম বাড়বে-এই সংবাদ আগাম জানতে পেরে বাজার থেকে গ্যাস সরিয়ে ফেলে কোম্পানিগুলো। এ সময় টাকা দিয়েও গ্যাস পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২ ফেব্রুয়ারি দাম বৃদ্ধির পর বাজারে সরবরাহ সামান্য বেড়েছে। কিন্তু তারপরও অনেকে চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছেন না। ফলে সরকার নির্ধারিত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমন্বয়ের নামে গত ২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এলপিজির দাম ২৬৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এতে প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ১৬৫০ টাকার নিচে গ্যাস নেই। কোথাও ১৭০০ টাকায়ও গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। সিলেট নগরী ছাড়াও আশপাশের জেলা, পৌরসভা, উপজেলা ও গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ এলপিজির ওপর নির্ভরশীল। সব জায়গায় একদিকে গ্যাস সঙ্কট অপরদিকে অতিরিক্ত দামের বোঝা টানতে হচ্ছে গ্রাহকদেরকে। সিলিন্ডার গ্যাস নিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। সেখানে পরিবহন খরচের দোহাই দিয়ে অনেকের কাছ থেকে ১৮০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
নগরীর বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, সরকার ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে সরকার দাম নির্ধারণ করেছে দেড় হাজার (১,৪৯৮) টাকা। কিন্তু দোকানে কিনতে গেলে দাম চাইছে ১৬৫০ টাকা। অনেক তর্কবিতর্কের পরে ৫০ টাকা কমে ১৬০০ টাকায় গ্যাস কিনেছি।
নগরীর শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুন নূর জানান, সরকার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য ৪০/৫০ টাকা মুনাফা রেখেই দাম নির্ধারণ করে। অর্থ্যাৎ ব্যবসায়ীরা যদি ১৪৯৮ টাকায় গ্যাস বিক্রি করে, তাতেও তাদের ৫০/৬০ টাকা প্রতি সিলিন্ডারে লাভ থাকে। কিন্তু এই লাভে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও ১০০/১৫০ টাকা লাভ করতে চান।
তিনি বলেন, মাত্র ১৪০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৫০/২০০ টাকা মুনাফা খোঁজার যে লোভ-এটাই গ্রাহকদের পকেট ফাঁকা করে দিচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুস শহীদ জানান, গত মাসে প্রতি সিলিন্ডার (১২ কেজি) গ্যাস কিনেছিলাম ১৩৫০ টাকা দিয়ে। এখন ১৬৫০ টাকা চাইছে।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার খুচরা গ্যাস ব্যবসায়ী সঞ্জিত দে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমি প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস ১৬৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ১৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করলেও আমাদেরকে কোম্পানীর কাছ থেকে ১৫৫০ টাকা দরে অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই বর্ধিত মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে গ্যাসের সিলিন্ডার।
নগরীর আম্বরখানা, সুবিদবাজার, বাগবাড়ী, মদীনা মার্কেট, শেখঘাট, দক্ষিণ সুরমা এলাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাস কোম্পানি থেকেই ১৫৫০ টাকা দরে প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে আমাদেরকে অতিরিক্ত টাকা ইনভেস্ট করতে হচ্ছে আবার মুনাফাও কমানো হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যথায় ব্যবসায়ীদের গ্যাস বিক্রি বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবেনা।
ফ্রেস এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর (বিএইচডি) সিলেটের ম্যানেজার সারওয়ার হোসাইন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমাদের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক আছে। বিভিন্ন কোম্পানী সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় আমাদের উপর একটু চাপ পড়েছে। তবে কোম্পানী থেকে আমাদের বলা হয়েছে আমরা মাসের টার্গেট ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছি। তাই পরবর্তীতে চাহিদামতো সরবরাহ নাও পেতে পারি।
পেট্রোম্যাক্স যমুনা এলপিজির ডিস্ট্রিবিউটর কামাল এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কামাল হোসেন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সিলিন্ডার সরবরাহ করতে পারিনা। এতে লোকসান গুনতে হয়। তাই আমরা ১৫১০ থেকে ১৫২০ টাকা সিলিন্ডার বিক্রি করি। আর কেউ যদি আমাদের অফিস থেকে নিজ খরচে সংগ্রহ করে তাহলে আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করি।
তিনি বলেন, আমরা এই মুহুর্তে চাহিদামতো সিলিন্ডার সরবরাহ করতে পারছিনা। কারণ ঢাকা থেকে পর্য াপ্তাত সরবরাহ পাচ্ছিনা। ফলে দিন দিন সঙ্কট আরো বাড়ছে। সরকার নির্ধারিত দামের ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি। ভোক্তা অধিকার আমাদের গোডাউন পরিদর্শনে এসেছেন আমরা ক্রয়ের ভাউচার দেখিয়েছি। দোকানে সিলিন্ডার পৌছে দিতে হলে আমাদেরকে ১৫২০ টাকা নিতে হচ্ছে। অন্যথায় সিলিন্ডার বিক্রি করে লাভ দুরে থাক লোকসান গুণতে হবে।