আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে উত্তাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:৩৮:০৯ অপরাহ্ন
প্রসঙ্গ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন
স্টাফ রিপোর্টার : আগামী জুন মাসে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। চলতি বছর অক্টোবর মাসের দিকে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ হিসেবে নির্বাচনের আট মাস সময় থাকলেও আগেভাগেই প্রার্থীরা মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মাঠ গোছানোর চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাÐের মাধ্যমে প্রার্থীরা থাকছেন ভোটারদের কাছাকাছি।
এদিকে সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে নগর আওয়ামী লীগে এক ধরনের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দলের ভেতরে থাকলেও এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। গত সোমবার একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বক্তব্যের পর এটি প্রকাশ্যে আসে। তিনি বক্তৃতায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামানকে আগামী সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এরপর শুরু হয় তোলপাড়।
এরই মধ্যে নাদেলের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। আর এই মন্তব্য ও বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিবৃতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোয়ন নিয়ে দলীয় প্রধানের এমন কোনো নির্দেশনা মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পাননি বলে দাবি করেন। দলীয় প্রার্থী নিয়ে তারা নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা জানান, সোমবার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সিসিক মেয়র পদে নির্বাচনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা’র বরাত দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা মহানগর আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে দুই নেতা ‘সুস্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে তারা পাননি। অতএব ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগরের শৃঙ্খলাসহ দলীয় ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ানো হয় সেজন্যে তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
বিবৃতির বিষয়ে যোগাযোগ করলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, তারা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) যে অভিযোগ এনে বিবৃতি দিয়েছেন, এমন কোনো শব্দ আমার বক্তব্যে ছিলো না। সিলেটে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে আমি কোনো বক্তব্যই রাখিনি। আমি বলেছি, আনোয়ারুজ্জামান বন্যা, করোনাসহ মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে ছিলেন এবং নেত্রী তাকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ তারা কেন এমন বিবৃতি দিলেন, বুঝে উঠতে পারছি না।
দলীয় একটি সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাকে ‘গ্রীণ সিগনাল’ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও দেখা করেছেন তিনি। এ সময় সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও তাকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি আনোয়ারুজ্জামানের।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলেন, এসব (প্রার্থিতা) বিষয়ে দলীয় কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। এখানে আমিসহ আরো কয়েকজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছি। সবাই কাজ করছি। তিনি (আনোয়ারুজ্জামান) নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দল যাকে প্রার্থী করবে, তার পক্ষেই আমরা সবাই কাজ করব।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাতজন নেতা মাঠে আছেন। তারা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্য থেকে একজন দলীয় মনোনয়ন পাবেন এতোদিন এমনটাই করা হচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ গুঞ্জন ওঠে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং দলীয় প্রধান তাকে সে লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর নগরজুড়ে ‘আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ শ্লোগান দিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। ফলে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর প্রার্থীদের মধ্যে ‘চাপা ক্ষোভ’ দেখা গেছে। মূলত এরই জের ধরে মহানগর আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে। আর এই মন্তব্য ও বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি সকালে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওই দিন হাজারো কর্মী-সমর্থক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে তাকে নগরীতে নিয়ে আসেন। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান অন্যতম। পরে আনোয়ারুজ্জামান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন। এরপর থেকেই জোরেশোরে আলোচনায় আসে তার নাম।
এদিকে দেশে ফেরার পর থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নগরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। গত সোমবার বেলা ৪টায় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাদাটিকর এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী।
বক্তব্যে নাদেল বলেন, আগামী দিনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠন এবং সিটি করপোরেশন যাতে আরও গতিশীল হয়, গণমুখী হয়, জনগণের জন্য যেন আরো বেশি করে কাজ করতে পারে, আমাদের সেই প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশা থাকবে। আমরা সবাই নেত্রীর নির্দেশে এখানে এসেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।