এইচএসসিতে নয়ে ছয় সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:০৫:০৫ অপরাহ্ন
বন্যা ও ইংরেজী ভীতির প্রভাব ফলে
স্টাফ রিপোর্টার : গত বছরের মে-জুন মাসে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় সিলেটের চার জেলা। তখন অসংখ্য শিক্ষার্থীর বই-খাতা ভেসে গিয়েছিল। সেই বন্যার ক্ষত লেগেছিলো এসএসসির ফলে। সারাদেশের মাঝে সবার পেছনে ছিলো সিলেট। সেই বন্যার প্রভাব এবার দেখা গেলো এইচএসসি’র ফলেও। সিলেটে পাসের হার কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এতে ৯ বোর্ডের মাঝে সিলেটের অবস্থান ছয়।
বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুধু বন্যা নয়, ইংরেজী ভীতিও সিলেটের খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী। বিশেষ করে শহরের বাইরের অর্থাৎ মফস্বলের কলেজগুলি এখনো ইংরেজী ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। আর এর প্রভাব পড়ছে ফলে। ইংরেজী ভীতির মূল কারণ মফস্বলে উপযুক্ত শিক্ষকের সংকট। এছাড়া মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ায় সামগ্রিক ফলাফল প্রভাব পড়েছে।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর সিলেট বোর্ডে পাশের হার ৮১ দশমিক ৪০। যা গতবছর ছিলো ৯৪ দশমিক ৮০। তবে পাশের হার কমলেও রেকর্ড পরিমাণ জিপিএ-৫ পেয়েছেন এই বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার পর এবারই সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ প্রাপ্তির রেকর্ড হয়েছে সিলেটে। এ বছর সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮৭১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৩১। পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। মেয়েরা ৮২.৬১ শতাংশ ও ছেলেরা ৭৯.৬১ শতাংশ পাস করেছে।
এবার সিলেট বোর্ডের অধীনে ৬৬ হাজার ৪৯১ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। এর মধ্যে পাস করেছে ৫৪ হাজার ১২২ জন। ফেল করেছে ১২ হাজার ৩৬৯ জন। ৩০৪টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে ১১টি প্রতিষ্ঠানে পাশের হার শতভাগ। এছাড়া শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠান নেই এবার।
পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ। এই বিভাগের পাশের হার ৯০.৫০ শতাংশ। এছাড়া ব্যবসা শিক্ষায় ৮০.২৩ শতাংশ ও মানবিকের ৭৯.১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়েও এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ। বিজ্ঞানের ৩ হাজার ৩৩৩ জন, মানবিকের ১ হাজার ২৬ জন ও ব্যবসা শিক্ষার ৫১২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
পাশের হার কেন কম- এ প্রসঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুন চন্দ্র পাল বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি ভীতি আছে। অকৃতকার্য হওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে খারাপ করেছে। এবার ইংরেজিতে পাসের পার ৮৫.৫৬ শতাংশ। শহরের বাইরের কলেজগুলো ইংরেজির ভালো শিক্ষক না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ভীতি কাটছে না বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া মানবিকে অধিক শিক্ষার্থীর কারণেও পাসের হার কমেছে জানিয়ে অরুন চন্দ্র পাল বলেন, এবার বিজ্ঞান বিভাগের ৯০.৫০ শতাংশ পাস করেছে। আর মানবিকে পাস করেছে ৭৯.১৮ শতাংশ। অন্যান্য বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বেশি কিন্তু আমাদের এখানে বেশি মানবিকের। এবছর সিলেটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২ হাজার ১৩৩ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৪৪ হাজার ৬৫১ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়।
বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে পড়ার জন্য উৎসাহ দিতে।
পাসের হার কমলেও এবার জিপিএ-৫ কিছুটা বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, এখন শিক্ষাথী ও অভিভাবকরা পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক সচেতন। সবার মধ্যে পড়ালেখা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। এসব কারণে জিপিএ-৫ দিনদিন বাড়ছে।
পাসের হার কমলেও এবারের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করলেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. কবির আহমদ। তিনি বলেন, গত পরীক্ষার আগে সিলেটে ভয়াবহ বন্যা ছিলো। এছাড়া করোনার কারণে কলেজে ঠিকমত ক্লাসও হয়নি। এসব বিবেচনায় এবারের ফলাফল সন্তোষজনক। তিনি বলেন, গত দুইবছরের ফলাফলের সাথে এবারের ফলাফল তুলনা করলে চলবে না। কারণে গতবছর সীমিত কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। আর তার আগের বছর অটো পাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলাওয়ারি ফলাফল বরাবরের মতোই শীর্ষে সিলেট জেলা। এই জেলায় পাসের হার ৮৬.৪৮ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৬৯ জন। হবিগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৮২.২৭ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩৪ জন। মৌলভীবাজার জেলায় পাসের হার ৭৪.৯১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৭৯ জন। সুনামগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৮২.৮৫ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৯ জন।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ফলাফল তুলে ধরেন বোর্ডের সচিব কবীর আহমদ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল।
এদিকে, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৮৩, বরিশালে ৮৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যশোরে ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিলেটে ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮০ শতাংশ ৩২ এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।