স্বাস্থ্যসেবায় দেশসেরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩০:১৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : স্বাস্থ্য সেবায় সকল মানদন্ডে র্যাংকিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের সকল সরকারী হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পর্যবেক্ষণ ও মান যাচাইয়ে নিয়মিত সরেজমিন পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে চিকিৎসা সরঞ্জাম, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তি, সেবা নিয়ে রোগীদের সন্তুষ্টিসহ নানা সূচকে মূল্যায়ন হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান। এ মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি হয় সেরা হাসপাতালের তালিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২২ সালের তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করে সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
জানা গেছে, দেশে ৩৭টি সরকারী মেডিকেল কলেজের মধ্যে হাসপাতাল আছে ২৯টি। এসব সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশী থাকা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। হাসপাতালগুলোতে সবসময় শয্যা সংখ্যার কয়েকগুণ রোগী ভর্তি থাকেন। হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সরকারিভাবে নিয়মিত র্যাংকিং করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ র্যাংকিংটি হয় ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে। এতে দেখা গেছে, সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে এখন শীর্ষে রয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ঠিক পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এছাড়া তৃতীয় স্থানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চতুর্থ স্থানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
তীব্র জনবল সংকটের মধ্যে রোগীর বাড়তি চাপ নিয়েই নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে হাসপাতালটিতে বেড অকুপেন্সি রেট বা শয্যার বিপরীতে রোগীর হার ছিল ১৭৭ শতাংশ। আগের বছর তা ২২০ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এখানকার শয্যা সংখ্যা ৯০০ হলেও সব সময় রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কাছাকাছি। জরুরী ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩ সহস্রাধিক রোগী।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, নানামূখী চাপ ও সংকটের মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য সুবিধা ও সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে নিয়মিতভাবেই সচেষ্ট তারা। এখানে অনেক কম খরচে কার্ডিয়াক এনজিওগ্রাম, কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার আক্রান্তদের রেডিওথেরাপিসহ জটিল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে পারছেন। শিশু স্বাস্থ্যসেবার মানও ভালো। সম্প্রতি হাসপাতালের ৪ শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টারকে ২৪ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এখানে দিনে ৭০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া সম্ভব।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জনসাধারণকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছে। রোগীদের সাথে দর্শনার্থী কম হলে, অযথা হাসপাতালে ঘুরাঘুরি বন্ধ হলে সেবার মান আরে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় লোকবলের সংকট দেশব্যাপী। এর মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিক হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীরা ভালো সেবা পাচ্ছেন। জনবল সংকট দূর করা গেলে সেবার মান আরো ভালো হবে। এখানে যেসব সেবা দেয়া হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সেবা। যারা জন্মগতভাবে বধির, তাদের কানের ভেতর এ ডিভাইস লাগানো হয়। ঢাকার বাইরে এ সেবা আর কোনো হাসপাতালে দেয়া হয় না। এরই মধ্যে আমরা ২৮টি কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট করেছি। গত ৬ মাসে আগে যাদের আমরা ইমপ্লান্ট করেছিলাম তাদের মধ্যে দুটি শিশু এখন কথাও বলতে পারছে। আমরা সেবার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্য সুবিধার পর্যাপ্ততা (ফ্যাসিলিটি স্কোরিং) নিয়ে ৮০ নম্বরের স্কোরের ভিত্তিতে এ র্যাংকিং প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে প্রধানত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশের পর্যাপ্ততা, বহির্বিভাগ, রোগী ভর্তিসহ হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও সুবিধা বিবেচনা করা হয়। এতে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬৫ দশমিক ১২। দ্বিতীয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬৪ দশমিক ৪৯। ৬৩ দশমিক ৩৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চতুর্থ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬৩ দশমিক ২০। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পঞ্চম স্থানে আছে ৬২ দশমিক ৯০ স্কোর নিয়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে সর্বশেষ র্যাংকিংয়ের তথ্য শুধু ফ্যাসিলিটি স্কোরিংয়ের ভিত্তিতে প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে এর বাইরেও আরো তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় করার কথা। এগুলো হলো অনসাইট মনিটরিং (অনলাইন পর্যবেক্ষণ), ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন (বস্তুগত যাচাই) ও পেশেন্ট স্যাটিসফেকশন (রোগী সন্তুষ্টি)। এক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে অনসাইট মনিটরিংয়ের কাজটি করে থাকেন জেলার সিভিল সার্জন। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন’ বা সরজমিন পরিদর্শন করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত চিকিৎসা যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন সেবা যাচাই করা হয়। এরপর রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হয় তারা সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা (পেশেন্ট স্যাটিসফেকশন)। এক্ষেত্রে ফ্যাসিলিটি স্কোরে ৮০, অনসাইট মনিটরিংয়ে ২০, বস্তুগত যাচাইয়ে ১৫০ ও রোগী সন্তুষ্টিতে ৫০- মোট ৩০০ নম্বরের ভিত্তিতে সার্বিক ফলাফল প্রকাশ করার কথা।
অধিদপ্তরের সর্বশেষ র্যাংকিংয়ে সেরা পাঁচ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে এমএজি ওসমানীতে ২০২০ সালে ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে ২৯ হাজার ২৮৭টি আর বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে ১১ হাজার ৩১০টি। বাকি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার, শহীদ জিয়াউর রহমানে হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার, খুলনায় হয়েছে সাড়ে চার হাজার এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় পরিসরের জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে ১৫ হাজার। স্বাস্থ্য বুলেটিনে উল্লিখিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক বড় পরিসরের অস্ত্রোপচার হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। প্রায় ৩১ হাজার বড় অস্ত্রোপচার হলেও স্কোরিংয়ে এ হাসপাতাল ১৫তম স্থানে রয়েছে।