পাঠ্যবই প্রত্যাহার ও সংশোধনী পরবর্তী পদক্ষেপ শীঘ্রই
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:০২:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : সমালোচনার মধ্যেই নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যবই দুটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আরও কয়েকটি বইয়ে সংশোধন আনা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে শীঘ্রই সংশোধনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, দুটি বই প্রত্যাহার ও নতুন করে কয়েকটিতে সংশোধনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আমরা এখন যেসব বই সংশোধন হবে, সেগুলোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। তাদের মতামত অনুযায়ী সংশোধনী ছোট হলে আমরা তা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেব। আর বেশি সংশোধনী এলে পুরো বই পাল্টে দেওয়া হবে। আশা করছি দ্রুতই সংশোধন করা সম্ভব হবে।
শুক্রবার এনসিটিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হলো।
কেন এই দুটি বই প্রত্যাহার করা হলো জানতে চাওয়া হয় এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের কাছে। তিনি বলেন, আগামী বছরের জন্য সব বই-ই সংশোধন করা হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সমালোচনা হচ্ছে, তার জন্য ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ দুটো বই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই দুটি বই নিয়ে সামাজিক একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে। বলা হচ্ছে- বইয়ে প্রচুর পরিমাণে দেব-দেবীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা মনে করেছি, এটা প্রত্যাহার করে নিলে কোনো সমস্যা নেই, শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না; তাই আমরা প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
এই দুই বই প্রত্যাহারে শিক্ষার্থীদের শিখনে কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, দুটো বই প্রত্যাহার করা হলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কোনো সমস্যা হবে না। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানে শুধু দুটি করে বই আছে। অন্য সব বিষয়ের একটি করে বই। এই দুটি বই রিসোর্স বুক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যে অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট করবে, সেগুলোতে কোনো তথ্যের দরকার হলে তারা যেন এখান থেকে সে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, সেজন্য দেওয়া হয়েছে। তবে তথ্য আশপাশের যে কোনো জায়গা থেকেও চাইলে সংগ্রহ করে নিতে পারে। তাতে কোনো আপত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসের তথ্যগুলোই মূলত এই দুটি বইয়ে এসেছে। সে তথ্যগুলো অনেক সময় চাইলেও প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা হাতের কাছে না পেতে পারে। ইন্টারনেট থেকেও হয়তো ডাউনলোড করতে পারবে না। তেমন ক্ষেত্রে এই বইয়ের সহযোগিতা যাতে তারা নিতে পারে। না নিলেও কোনো সমস্যা নেই। এটা ছাড়াও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থী প্রজেক্ট তৈরি করতে পারে।
এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ওই দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটিরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে, যা শীঘ্রই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বইয়ে কী কী সংশোধন আসছে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, অনুশীলন পাঠবই দুটোতে কিছু কিছু জায়গায় আপত্তি আছে। সেগুলো আমরা সংশোধন করব। যেমন বলা হয়েছে- বখতিয়ার খলজী দখল করে নিয়েছে, সেটায় আপত্তি আছে অনেকের। দখলের জায়গায় অন্য শব্দ ব্যবহার করা যায় কিনা আমরা সেটা দেখব। এমন যেসব আপত্তি আছে, আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, মিডিয়াসহ অন্য সব জায়গা থেকে শুনে সেগুলো নোট নিয়েছি। এখন এসব বইয়ের লেখকদের ডেকে বিষয়টি জানানো হবে। শিক্ষার্থীদের শিখনের কোনো ক্ষতি না করে সংশোধন করলে কোনো সমস্যা নেই। তারা সেটি বিবেচনা করে যেসব সংশোধনী দেবেন, আমরা সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিব।
তিনি বলেন, স্কুলগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তারপর বইগুলো সংশোধন বা পরিমার্জন শুরু করব। সেটা আগামী মার্চে শুরু হতে পারে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও বিবেচনা করা হবে। আর অনুশীলন বইগুলোর সংশোধন করা হবে শিগগির।