বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০১:৩০ অপরাহ্ন
ইদানিং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কথাটি প্রায়ই উচ্চারিত হতে শোনা যাচ্ছে। আগের উন্নয়নের রোল মডেল ছেড়ে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। দেশের সিংহভাগ সাধারণ মানুষ যখন জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন ক্ষমতাসীনদের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি রীতিমতো ভাগ্যের পরিহাস বলে প্রতীয়মান হচ্ছে তাদের কাছে।
উল্লেখ্য, একটি স্মার্ট সিটি বা কান্ট্রি হচ্ছে এমন নগরী বা দেশ যেখানে প্রচলিত নেটওয়ার্ক ও সেবাসমূহকে অধিকতর কার্যকর গড়ে তোলা হয় ডিজিটাল সলিউশন বা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে, যাতে ঐ নগরী বা দেশের বাসিন্দা বা বাসিন্দারা ব্যবসা বাণিজ্যসহ বসবাসের ক্ষেত্রে অধিকতর সুযোগ সুবিধা লাভ করেন। একটি স্মার্ট সিটি বা নগরীতে পরিচালনাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, জনগণের সাথে তথ্য আদান প্রদান এবং সরকারী সেবাসমূহের মান উন্নয়ন এবং জনকল্যাণ সাধনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। বিশেষভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৯৫ শতাংশের বেশী মানুষ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে। এ অবস্থায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে বিশাল ব্যয় ও কর্মযজ্ঞ প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে টাকা আসবে কোত্থেকে? যখন দেশের কোটি কোটি মানুষকে কোনমতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে, তখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া কি আকাশ কুসুম কল্পনা অর্থাৎ অবাস্তব চিন্তাভাবনা নয়? গতকাল বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে আসন্ন রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫-৩০ শতাংশ বাড়ার শংকা রয়েছে। খোদ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এমন আশংকা করছে। তবে পণ্যের বাজারে কোন ধরণের ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে যে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীরা যোগসাজস করে পণ্যের দাম বাড়ায়, যাতে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়। পাইকারী ব্যবসায়ীদের মতে, ডলারের দাম বেশী থাকায় এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানী কমে গেছে, যার কারণে বন্দরে এসব পণ্যের সরবরাহ কম।
সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেকের অভিযোগ অসাধু আমদানিকারক, কোম্পানী ও ব্যবসায়ীরা বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করে ফায়দা লুটছে। অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে এবং সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তবে তারা কীভাবে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।
শুধু স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিই দেশের ডিজিটাইজেশনের লক্ষণ নয়। এদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারে এখনো বিশ্বে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর শীর্ষে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আগে এদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এজন্য এর মূল্য হ্রাস । অন্যথায় এসব কিছু থেকে যাবে মুখরোচক শ্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বলা যায়, ‘বাইরে ফিটফাট কিন্তু ভেতরে সদরঘাটে’র মতো। আমরা শ্লোগান সর্বস্ব স্মার্ট দেশ বা ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিবর্তে খেয়ে পরে শান্তিতে বেঁচে থাকার মতো একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ দেশ প্রত্যাশা করি।