বাজেট প্রস্তাবনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক : এনবিআর চেয়ারম্যান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০০:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেছেন, সিলেট চেম্বার সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন থেকে জাতীয় বাজেটে প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়। এসব বাজেট প্রস্তাবনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদেরকে বাজেট প্রণয়ন করতে হয় সমগ্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে। তাই সকল প্রস্তাব বিবেচনা করা সম্ভব হয় না। তবে সিলেট চেম্বারের প্রস্তাবগুলো আমরা বিবেচনার আন্তরিক প্রচেষ্টা করে থাকি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সিলেট চেম্বার অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে সুন্দর একটি প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা আয়োজন ও বাজেট প্রস্তাবনা পুস্তক আকারে প্রকাশ করেছে। তিনি এজন্য সিলেট চেম্বার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এবছর আমরা বাজেট তৈরীর জন্য লম্বা সময় নিয়ে কাজ করছি, তাই কোন সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ে সম্পূরক প্রস্তাবনা থেকে থাকলেও পরবর্তীতে তাও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রেরণ করতে পারবেন। তিনি বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অডিটের জন্য আমরা ‘সেকেন্ডারি ডাটাবেজ অডিট সিস্টেম’ চালু করতে যাচ্ছি। এটি চালু হলে অডিট প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সহজতর হবে। ক্যাপিটাল মার্কেট প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ার মার্কেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সরকার ইতোপূর্বে বিতর্কের স্বীকার হয়েছে। তাই ট্যাক্স ছাড় বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলেই যে ক্যাপিটাল মার্কেট চাঙ্গা হয়ে যাবে, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। এজন্য অন্য কোন উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে নানা দাবী ও অভিযোগ জানিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা। ব্যাবসায়ীরা বলেন, মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে বিগত কয়েকবছর দেশের মতো সিলেটেও ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি ও পর্যটন খাতের উপর নির্ভরশীল থাকায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা এসময় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে গেছেন। তার উপর গত বছরের প্রলয়ংকারী বন্যা ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে রয়েছেন। এমতাবস্থায়ও ভ্যাট বিভাগের পক্ষ থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীদেরকে বর্ধিত হারে ভ্যাট প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা বলেন, ভয়াবহ বন্যা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম মন্দার কারণে সিলেটের ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের সহমর্মিতামূলক মনোভাব রাখা একান্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আগামী বাজেটে কোনরকম ভ্যাট, ট্যাক্স বৃদ্ধি না করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। এছাড়াও সিলেট থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিমানযোগে সরাসরি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে সিলেটে প্যাকিং হাউজ নির্মাণ, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাগেজ সিস্টেম পুনরায় চালু, ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকায় বর্ধিতকরণ, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীপথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি চালু, উপজেলা পর্যায়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যে রাজস্ব কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা সহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার দুপুর ১২ টায় নগরের একটি অভিজাত হোটেলে এই প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে এ সভাপর আয়োজন করা হয়।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক, সদস্য (আয়কর নীতি) সামস্ উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা।
সভায় বক্তাগণ ভোগ্যপণ্য পরিবেশকদের নিকট হতে ভ্যাট আদায় না করা, বিসিক শিল্প মালিকদের ভ্যাট হ্রাস করা, স্থলবন্দর ও এলসি স্টেশন সমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সমস্যা দূর করা, ইটভাটা মালিকদের ভ্যাটের কিস্তি পরিশোধের সময় বৃদ্ধি করা, কোর্ট ফি ডকুমেন্টের অপ্রতুলতার জন্য অনলাইনে কোর্ট ফি আদায়, ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক তাহমিন আহমদ বলেন, তেমন কোন বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত আমদানি, পর্যটন ও ট্রেডিং ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। এজন্য সিলেটের দাবী-দাওয়া ও চেম্বারের প্রস্তাবনা গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি আহবান জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সহ সভাপতি মোঃ আতিক হোসেন, কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেট এর কমিশনার মোঃ আকবর হোসেন, কর অঞ্চল-সিলেট এর কর কমিশনার সৈয়দ জাকির হোসেন, সিলেট চেম্বারের পরিচালক ও ভ্যাট, বাজেট, শুল্ক, কর ও ট্যারিফ সাব কমিটির ডাইরেক্টর ইনচার্জ আবু তাহের মোঃ শোয়েব, চেয়ারম্যান ও পরিচালক মোঃ হিজকিল গুলজার, অতিরিক্ত কর কমিশনার হেমল দেওয়ান, অতিরিক্ত কাস্টম্স কমিশনার মুহাম্মদ রাশেদুল আলম, সিলেট ওমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, সিলেট চেম্বারের পরিচালক জিয়াউল হক, মুজিবুর রহমান মিন্টু, আলীমুল এহছান চৌধুরী, প্রাক্তন সিনিয়র সহ সভাপতি শাহ আলম, সাবেক সহ সভাপতি হাজী মোঃ দিলওয়ার হোসেন, মোঃ এমদাদ হোসেন, সাবেক পরিচালক পিন্টু চক্রবর্তী, এহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা সিএন্ডএফ এজেন্ট গ্রুপের সভাপতি মোঃ বশিরুল হক, ভ্যাট, বাজেট সাব কমিটির কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাজাহারুল হক, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল আলীম পাঠান, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক নাঈম সরফরাজ ও প্রতিনিধিবৃন্দ, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালক নুরুল ইসলাম ও প্রতিনিধিবৃন্দ, সিলেট চেম্বারের সচিব মোঃ গোলাম আক্তার ফারুক ও কর্মকর্তাবৃন্দ, সিলেটের বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কাস্টম্স, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সিলেটের গণ্যমান্য ব্যবসায়ীবৃন্দ। সভা সঞ্চালনা করেন সহকারী কর কমিশনার অর্পা বণিক ও সিলেট চেম্বারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মিনতি দেবী।