অনাবৃষ্টিতে বোরোর ফলন নিয়ে শঙ্কা : ফেব্রুয়ারীর শেষ দিকে বৃষ্টির আভাস !
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১:০৭:৩৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বৃষ্টির জন্য সিলেটজুড়ে রীতিমত চলছে হাহাকার। গেল রোববার প্রকৃতি থেকে মাঘ মাস বিদায় নিয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ফালগুন। কিন্তু এবার মাঘের সাথে মেঘের দেখা মিলেনি। অনাবৃষ্টির কারণে চলমান বোরো মওসুমে হাওরাঞ্চলে সেচ সঙ্কটে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বোরোর ফলন। গ্রামে গ্রামে জুমআ’র দিনে, ওয়াজ মাহফিল ও বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বৃষ্টির জন্য চলছে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত। এরই মধ্যে চলতি ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে সিলেটে বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তবে বৃষ্টির পরিমাণ সামান্য হওয়ার সম্ভাবনায় ফিকে হতে চলেছে কৃষকের স্বপ্ন। ফেব্রুয়ারী মাসে সিলেটে স্বাভাবিকভাবে ৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকলেও মাসের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলে দেখা মিলেনি বৃষ্টির। যদিও চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অর্থাৎ ২২-২৩ ফেব্রুয়ারীর দিকে সিলেটে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে বলে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এই সময়ে পুরো সিলেটজুড়ে না হয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দেয় আবহাওয়া অফিস। তবে মার্চে পুরো সিলেটজুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
আবহাওয়া অফিস সিলেট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মাস নভেম্বর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারীতে সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের অর্ধেক। এই ৩ মাসে সিলেটে স্বাভাবিকভাবে ৪৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে ২৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আর এর সবটুকু হয়েছে নভেম্বরে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারীতে সিলেটে রেকর্ড করার মতো কোন বৃষ্টি হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে মার্চে স্বাভাবিকভাবে ১৫৫ দশমিক ৩, এপ্রিলে ৩৭৫ দশমিক ৬, মে মাসে ৫৬৯ দশমিক ৬, জুন মাসে ৮১৮ দশমিক ৪, জুলাই মাসে ৮১৯ দশমিক ২, আগস্ট মাসে ৬১২ দশমিক ৬, সেপ্টেম্বরে ৫৩৫ দশমিক ৯, অক্টোবরে ২২৩ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গেল বছরের জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিকভাবে ৮১৮.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথাস থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে ১৪৫৬ দশমিক ২ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩৭.৬২ মিলিমিটার বেশি ছিল। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পাশাপাশি এই অতিবৃষ্টির কারণে গেল বছরের জুনে সিলেটজুড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সদ্য বিদায়ী সিনিয়র আবহাওয়াবিদ ও বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত সাঈদ আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, গত নভেম্বর মাসে স্বাভাবিকভাবে ৩০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টির কথা থাকলেও হয়েছে ২৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার। ডিসেম্বর মাসে ৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টির কথা থাকলেও কোন বৃষ্টি হয়নি। একদিন হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে ঠিক তবে তা কাউন্ট করার মতো ছিলনা। জানুয়ারী মাসে ৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও কোন বৃষ্টিপাত হয়নি।
তিনি জানান, সিলেটে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন বৃষ্টি হয় না। আবার হলে অতিবৃষ্টি হয়। আবার তাপমাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। ফেব্রুয়ারী মাসে সিলেটে স্বাভাবিকভাবে ৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কোন বৃষ্টি হয়নি। এ মাসে বৃষ্টির আভাস থাকলেও তা খুবই কম। এই বৃষ্টি বোরো ফসলের জন্য কতটা সহায়ক হবে তা বলা যাচ্ছেনা।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সদ্য যোগদানকারী সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সজীব হোসেন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমি ২/৩ দিন হলো সিলেটে যোগদান করেছি। এখনো সব বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হতে পারিনি। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সিলেটের আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত আপডেট দিবো।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব শুধু সিলেট নয়, সেটা সারা দেশ তথা গোটা বিশ^জুড়ে। সিলেট অঞ্চলে বোরো ফসলের জমি বেশী থাকায় অনাবৃষ্টির প্রভাব সরাসরি ফসলের উপরে পড়ছে। চলতি ফেব্রুয়ারী মাসে সিলেটে স্বাভাবিকের কম বৃষ্টিপাতের শঙ্কা থাকলেও মার্চে বৃষ্টিপাতর বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটে মার্চ থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এর ধারা জুলাই-আগস্ট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞদের মতে- বৈশ্বিক জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা যেমনি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে তেমনি ঠাণ্ডাও অনুভূত হচ্ছে। ঋতুচক্রে দেখা দিয়েছে বিশাল হেরফের। আগের মতো এখন আর প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে যথাসময়ে ঋতুর আবির্ভাব ঘটছে না। এ কারণে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ছাড়া অন্য সব ঋতুর অস্তিত্ব অনুভূত হচ্ছে না। বিলম্বিত হচ্ছে শীত, বর্ষার আগমন অথবা অসময়ে ভারী বর্ষণ কিংবা ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। যেকোনো এলাকা মরুকরণের প্রাথমিক আলামতই হচ্ছে এসব। আর এ আলামতটি পরিলক্ষিত হচ্ছে সমগ্র বাংলাদেশেই।