ভূমিকম্পে কাঁপল সিলেট, বাড়লো শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৪:৩৭:২০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৬ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে সিলেটের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পেরই শঙ্কা বাড়ায়।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। ভূমিকম্প ছিল সিলেটের ছাতক থেকে ১১.৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, সিলেট শহর থেকে ২৬.৭ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্বে এবং মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে ২১.৭ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। ঢাকা থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে উৎপত্তিস্থলের এর দূরত্ব ছিল ২০৩ কিলোমিটার।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুসারে, এই ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ৬৪.৮ কিলোমিটার।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া সহকারী শ্রীনিবাস দেবনাথ বলেন, ভূমিকম্পটি ক্যাটাগরি ‘লাইট’ বা মৃদু ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৪.৩। এর কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্য।
এদিকে, ভূমিকম্প অনুভূত হলেও সিলেটের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এদিকে, সিলেট নগরের এক বাসিন্দা জানান ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভবন কেঁপে ওঠে। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এ সময় আতঙ্কে অনেককে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। তবে নগরীর বেশিরভাগ মানুষ তা ঠের পাননি।
বছর দশেক আগে বাংলাদেশ, জাপান ও শ্রীলঙ্কার একটি বিশেষজ্ঞ দল সিলেট নগরীর ছয় হাজার ভবনের ওপর জরিপ চালিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, সিলেটের বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ভবনই অপরিকল্পিত এবং মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। রিখটার স্কেলে ৭ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেগুলো ধসে পড়বে। পাল্টে যেতে পারে সিলেটের মানচিত্রও। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিলেটের গ্যাস এবং তেলক্ষেত্রগুলো। পরিবেশ বিপর্যয়ও নেমে আসবে।
সিলেটে নগরায়ণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প-ঝুঁকি মাথায় রেখে একটি মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সেটি কার্যকর হয়নি। ফলে বহুতল ভবন নির্মাণ, নগর সম্প্রসারণ হচ্ছে অনেকটা খেয়ালখুশিমতো। বিল, খাল-নালা, জলাভূমি ভরাট করে, পাহাড়-টিলা কেটে হাউজিং প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। এতে ভূমিকম্পপ্রবণ সিলেটে ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে কয়েকগুণ।
সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫৭টি ভূমিকম্পের প্রভাবে কেঁপেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গতকাল কাঁপলো সিলেট। ২০২১ সালের ২৯ মে এক দিনেই টানা ছয় দফা মৃদু ভূমিকম্পের কারণে সিলেট শহরসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব কম্পন বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের চারটি জেলা বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তুরস্কে শতাব্দির বড় ভূমিকম্পের পর সিলেটে ভূমিকম্পের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে, বেড়েছে শঙ্কাও।