বাজারে অস্থিরতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৭:৩৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে নেই কোনও সুখবর, বরং চলছে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে। যা নিয়ে ক্রেতাদের কেবলই হতাশা।
শুক্রবার নগরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় আছে মুরগি ও ডিমের দাম। সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকার উপরে বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি। ব্রয়লার মুরগির বাদামি রঙের ডিম হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। যা এক মাস আগেও ছিলো ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত।
উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও অনেক খামার বন্ধ হওয়ায় বাজারে ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, খাদ্য ও বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধির ফলে মুরগির দাম একটু বাড়তে পারে। তবে এখনকার দাম মাত্রাতিরিক্ত। এত বেশি দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হোক, সেটি আমরাও চাই না। কারণ, প্রান্তিক খামারিরা বাড়তি দাম পাচ্ছেন না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর ফার্মের মুরগির চাষ হয় ৩১ কোটি ১৮ লাখ। গত কয়েক বছরে উৎপাদন ক্রমে বেড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার চাহিদার সঙ্গে উৎপাদন বাড়লেও কাঁচাবাজারের মতো ডিম ও মুরগির বাজারেও সময়ে-সময়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। তবে এবার বাজারে মনিটরিং কম দৃশ্যমান হচ্ছে।
বাজারে চালের দাম এখনো উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। সামনে আসছে রমজান। এ সময়ে বাজারে ছোলা ও মসুর ডালজাতীয় খাবারের চাহিদা বাড়ে। এমন সময়ে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম বাড়ছে। মানভেদে মসুর ডালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। আর সয়াবিন তেল প্রতি লিটার সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ১৯০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে চিনির সংকট এখনো কাটেনি। প্যাকেটজাত চিনি প্রায় উধাও। সীমিত খোলা চিনির সরবরাহও। তাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। লাল চিনির দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকার আশপাশে।
এদিকে, শীতকালীন সবজি নাগালের মধ্যে এলেও কাঁচা মরিচ কিনতে দাম বাড়তি দিতে হচ্ছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়-কেজিপ্রতি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, চিচিংগা ৪০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, শিম ৪০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, শসার কেজি ৪০ টাকা ও মুলার কেজি ৩০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রকারের ডাল ও মসলা জাতীয় পণ্যের দাম। বাজারে চিকন মসুর ডাল ১৫০, মোটা ১০০ টাকা। অ্যাংকর ডাল ৮০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ৯০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ডাবলি ৭০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা।
এছাড়া আদা ১০০ টাকা, পেঁয়াজ দেশি ৫০, ইন্ডিয়ান ৪০, আলু ২০, রসুন বিদেশি ২০০ টাকা, দেশি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বন্দরবাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘কৌশলে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। আজকে এইটা একটু বাড়ে তো কাল ওইটা বাড়ে। এইভাবে দাম বাড়ানোর একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের এত দাম বাড়ছে যে হিসাব করে কুলাতে পারি না কোনটা কম কিনবো আর কোনটা বেশি কিনবো। এখন তো দিন দিন কম কেনার দিকেই যাচ্ছে সবাই।