বেওয়ারিশ কুকুর সমাচার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০১:০৭ অপরাহ্ন
সিলেট নগরীসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুরের কারণে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে রাতের বেলা নিরাপদে চলাচল করা ইদানিং মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেলে সাধারণতঃ সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাগুলো এগুলো নিধন করতো। কিন্তু অমানবিক হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সাল থেকে সারাদেশে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এভাবে গত এক দশকে প্রায় প্রতিটি নগর ও শহরে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
কুকুর নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কুকুরকে টিকাদান ও বন্ধ্যাকরণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অনেক সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় এজন্য কোন অর্থ বরাদ্দ নেই বলে জানা গেছে। ইতোপূর্বে ঢাকায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ‘অভয়ারণ্য’ বেওয়ারিশ কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু করে। হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ও ওয়ার্ল্ড ফুড অর্গানাইজেশন এর অর্থায়নে সংস্থাটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২ বছরে ঢাকায় দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ১০ হাজার কুকুর বন্ধ্যাকরণ করে ও টিকা দেয়। ২০১৫ সালে এই কর্মসূচী বন্ধ থাকে। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ‘অভয়ারণ্য’ আবার কার্যক্রম শুরু করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তাদের এই কর্মসূচি চলে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশজুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়বে। তাই কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি সিটি কর্পেরেশন ও পৌরসভায় সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
২০১৬ সালের জানুয়ারীতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা নগরীর কুকুর জরীপ করে। তাদের হিসাব অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। মহাখালি সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ানো রোগীরা আসেন। এ ধরনের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নতুন পুরনো মিলে প্রতিদিন সহ¯্রাধিক রোগীকে টিকা দিতে হচ্ছে। সিলেটে এ ধরনের কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও সিলেট নগরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন শহর ও উপজেলা শহরে কুকুরে কামড়ানো বা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সেই তুলনায় প্রতিষেধক ইনজেকশন ও ওষুধের মারাত্মক অভাব বিদ্যমান। অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতংকের টিকা নেই। জলাতংকে আক্রান্ত কুকুরের কামড় খেয়ে টিকা নিতে না পারায় রোগীর মৃত্যুর খবর মাঝে মাঝে মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সাধারণতঃ কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, জলাতংক রোগের আশংকা থাকে। শিশুদের নাকে মুখে কামড়ালে ৭০/৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ সাধারণতঃ বাঁচে না। আক্রান্ত ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করে। ক্ষতস্থানে ব্যথা হয়, জ্বালাপোড়া করে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ঢোক গিলতে গলায় ব্যথা লাগে। জ্বরও হতে পারে। খিঁচুনিও হতে পারে। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ইচ্ছা থাকলেও পানি খেতে পারে না। বাতাস সহ্য করতে পারে না। মৃত্যুর আগে আলোক ভীতি জন্মে। আবার পা থেকে শুরু করে পুরো শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরিণতিতে মৃত্যু ঘটে।
সর্বোপরি সিলেট সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুর একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতের বেলা অনেকে কুকুরের ভয়ে বিভিন্ন গলিপথে চলাচল করতে ভয় পাচ্ছেন। অনেক সময় মানুষ দেখলেই তেড়ে আসছে এসব কুকুর। মাঝে মাঝে কুকুরে কামড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় টিকা বন্ধ্যাকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা এভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকলে নগরীতে বাসিন্দাসহ লোকজনের নিরাপদে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে, এমন আশংকা নগরবাসীসহ সচেতন মহলের। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে আমরা মনে করি।