শাবিতে র্যাগিং : বহিষ্কৃৃত ৫ ছাত্রলীগকর্মী ছাড়াও জড়িত আরো ১০ জন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:৩৪:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজতবা আলী হলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এই পাঁচজন ছাড়াও র্যাগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আরো ১০ জন। তারা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। শনিবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তদন্ত কমিটি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত প্রতিবেদন দেবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এতে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া পাঁচজনের বাইরে নতুন করে কাউকে শোকজ কিংবা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রক্টর আরো বলেন, যাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের হলের আসন বাতিল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থানেও বিধিনিষেধ রয়েছে।
২০ ফেব্রæয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে র্যাগ দিয়েছিলেন একই বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী। র্যাগের শিকার নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী ভয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। পরে ওই শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বিষয়টি মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধানকে অবহিত করেন। তিনি ওই রাতের ঘটনাকে তার ‘জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ রাত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হলে ২২ ফেব্রæয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। প্রথম দিকে শুধু এক শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচিত হলেও পরে জানা যায়, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ১০ জনের মতো নবীন শিক্ষার্থী রাতে পরিচয় পর্বের নামে ডেকে নিয়ে র্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে ১৫-১৬ শিক্ষার্থী জড়িত।
র্যাগের ঘটনায় বহিষ্কৃত ৫ শিক্ষার্থী হলেন, মো. আপন মিয়া, মো. আল আমিন, মো. পাপন মিয়া, মো. রিয়াজ হোসেন ও মো. আশিক হোসেন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের (বিবিএ) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই সঙ্গে তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তবে তাদের দলীয় কোনো পদ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারাও স্বীকার করেছেন বহিষ্কৃতদের মধ্যে ৩ জন তাদের কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু করেছে। আগামী ৫ মার্চ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান মাজহারুল হাসান মজুমদার বলেন, তদন্তকাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর বাইরে নতুন করে আর কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ও জড়িতরা মুখোমুখি : র্যাগের শিকার ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী এতটাই ভয় পেয়েছেন, তিনি রাতেই বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। বাড়িতে যাওয়ার পর বিষয়টি তার বিভাগীয় প্রধানকে মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তায় জানান। ওই শিক্ষার্থী বলেন, ওই রাতে র্যাগের ঘটনায় তিনি খুবই ভয় পান। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আপত্তিকর বিষয়ে একে অপরের সঙ্গে অভিনয় করতে বাধ্য করছিলেন। এগুলো না করলে হুমকি ও নির্যাতনের ভয় দেখানো হচ্ছিল।
তিনি আরো বলেন, নবীন শিক্ষার্থী যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউই এই ব্যাপারে মুখ খুলেননি। তবে বিভাগীয় প্রধান আগে বলেছিলেন, র্যাগের ঘটনা ঘটলে যাতে তাকে অবহিত করা হয়। এই বিষয়টি মাথায় আসার পর বাড়িতে ফিরে গিয়ে তিনি মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তায় অবহিত করেন।
র্যাগের শিকার ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, মুঠোফোনে বিষয়টি জানানোর পর বিভাগীয় প্রধানসহ তদন্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা তাকে র্যাগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সামনে মুখোমুখি করান। এ সময় তিনি ৫ জনকে শনাক্ত করতে পারেন। তবে র্যাগের সঙ্গে জড়িতরা তিনি যে অভিযোগগুলো এনেছেন, সেগুলো স্বীকার করেননি। তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার তাকে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে লিখিত আকারে ঘটনার বিস্তারিত জানানোর জন্য বলা হয়। তিনি ওই দিনই ঘটনার বিস্তারিত লিখে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।