মাধবপুরে বখাটে কিশোর দলের যন্ত্রণায় বিষ পানে কিশোরীর মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:২৪:৪৮ অপরাহ্ন
মাধবপুর প্রতিনিধি: “ এই বখাটে পুলাপানের যন্ত্রণায় আমার মেয়ে জীবন গেছে। এক বছর ধইরা এই বখাটে দল আমার মেয়েকে যন্ত্রণা দিয়ে আইছে। স্কুল থেইকা উঠাইয়া নিয়া যাইতে ছিল। হাত ধইরা টানা টানি করিয়াছে। অপমান অপদন্ত সইতে না পারিয়া আমার মেয়ে বিষ পান কইরা জীবন দিয়াছে। বার বার অভিভাবকের কাছে বিচার চাইয়াও কোন বিচার পাই নাই”। মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া গ্রামে বখাটের অপমান ও অপদস্তে বিষ পানে আত্মহত্যাকারী ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মাসুমা (১৪)’র মাসকুরা বেগম মেয়েকে হারিয়ে শনিবার সকালে বাড়িতে এমন বিলাপ করছিলেন। মাসুমার লাশ এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে এনে দাফন করতে গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন। মাসুমার সহপাঠীরা সাথী বর্ষা, প্রিয়া, ছাদিয়া জানান, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মাসুমাকে নিয়ে তারা আন্দিউড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিশোরী ক্লাবে গান শিখতে যায়। এ সময় আন্দিউড়া গ্রামের কিশোর গ্যাং সদস্য নয়ন, ইমন, বিজয়, আরমান নামে ৪ বখাটে কিশোর বিদ্যালয়ের কক্ষে ঢুকে মাসুমার উপর শারীরিক নির্যাতন শেষে তাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ৪ বখাটের কবল থেকে স্কুল শেষে ফেরার পথে রাস্তায় এসে আবার মাসুমার হাত ধরে টানা টানি করে ভাবি বলে সম্বোধন করে। মাসুমার মা মাসকুরা জানান, প্রায় ১ বছর ধরে আন্দিউড়া গ্রামের মুন পাঠানের ছেলে বখাটে কিশোর নয়নের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে মাসুমাকে উত্যক্ত করে আসছে। তাদের অভিভাবকের কাছে বিচার দিয়ে কোন লাভ হয়নি। শুক্রবার বিদ্যালয়ে ঢুকে মাসুমার উপর শারীরিক নির্যাতন করে। বিকালে মাসুমা মন খারাপ করে বাড়িতে চুপচাপ বসে থাকে। বখাটেদের অপমান অপদস্ত সইতে না পেরে হঠাৎ করে বাড়িতে বিষ পান করে। মাসুমার পিতা মরতুজ আলী জানান, মাসুমাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে শনিবার ভোর রাতে মাসুমা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমার মেয়ের এ পরিণতির জন্য নয়ন সহ দায়ী বখাটে কিশোরদের দৃষ্টান্তমূলক আইনের বিচার চাই। শনিবার সকালে আন্দিউড়া গ্রামে মাসুমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মাসুমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার সহপাঠীরা ও এলাকার লোকজন ভীড় জমিয়েছেন। অভিযুক্ত কিশোর নয়নের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে তাদের কেউ নেই। মা বাবা আত্মীয় স্বজন অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। মামী রেহেনা বেগম জানান, তারা মাসুমার নির্যাতনের কথা শুনেছেন। মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় এখনও কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।