জগন্নাথপুরে সেই খাদের পাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:২৯:৫১ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে আলোচিত সেই খাদের পাশে এবার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে ভূক্তভোগী জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিগত ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় মানুষের বাড়ি ঘরের সাথে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরই অংশ হিসেবে জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের শিবগঞ্জ-রাণীগঞ্জ প্রধান রাস্তার কুবাজপুর ও আছিমপুর গ্রামের মধ্যস্থানে রাস্তা ভেঙে বিশাল খাদে (ডহর) পরিণত হয়। যে কারণে এ রাস্তা দিয়ে সব ধরণের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। যদিও স্থানীয় ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মিলাদের প্রচেষ্টায় রাস্তার পাশে হাওরের জমির উপর দিয়ে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করায় কোন রকমে ছোট ছোট গাড়ি ও মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন। মেঘ-বৃষ্টি হলে আর কোন যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। আর বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাচলের কোন সুযোগ নেই। এ নিয়ে কয়েক দিন আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলোআপ করে সংবাদও ছাপা হয়। এছাড়া এখানে রাস্তা না হলে এ খাদ দিয়ে স্থানীয় কুবাজপুর হাওরে পানি ঢুকে বোরো ফসল হানির শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েন কৃষকরা।
অবশেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এ বিশাল খাদের পাশ দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার এখানে বাঁধ নির্মাণের জন্য মাপজোক করে ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মিলাদকে প্রকল্প বুঝিয়ে দেন পাউবো’র জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) মুহাম্মদ হাসান গাজী। প্রকল্প বুঝে পাওয়ার সাথে সাথে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এখানে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় উপস্থিত ও পথচারী কৃষক-জনতার মধ্যে রীতিমতো স্বস্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে বলেন, এখানে বাঁধ নির্মাণ হলে আমরা দুই দিক থেকে উপকৃত হবো। বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করা যাবে ও হাওরের বোরো ফসলও রক্ষা হবে।
এ বিষয়ে পাউবো’র জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) মুহাম্মদ হাসান গাজী জানান, প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩নং পিআইসি কমিটির মাধ্যমে এখানে বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। এ পিআইসি প্রকল্পের সভাপতি হলেন ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মিলাদ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধাপে ধাপে পিআইসি কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে। এটি দেরিতে অনুমোদন হওয়ায় এখন কাজ শুরু হলেও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বাঁধে মাটিকাটা ঠিকাদার টিটু মিয়া বলেন, এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হলে কমপক্ষে ৩ লাখ মাটি লাগবে। গাড়িতে মাটিকাটার রেট হচ্ছে কমপক্ষে ৫ টাকা ফুট। সেই হিসেবে এখানে ১৫ লাখ টাকার মাটি লাগবে।
সদ্য কাজ পাওয়া ৩৩নং পিআইসি কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মিলাদ বলেন, কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশনায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এখনো ওয়ার্কওয়ার্ডারও পাইনি। শুনেছি প্রায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বরাদ্দ দিয়ে এখানে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তাই বরাদ্দ না বাড়ালে কাজ করবো কি না এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছি। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে বাঁধ হোক সবার আগে আমি চাই। এখানে বাঁধ হলে রাস্তাও হবে আবার হাওরের ফসলও রক্ষা হবে। তবে লাখ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে পারবো না। আমার লাভের প্রয়োজন নেই। পুনরায় মাটির হিসাব করে প্রয়োজনীয় টাকা পেলেই কাজ করবো।
উল্লেখ্য-জগন্নাথপুরে এবার পৌণে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭টি পিআইসি প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর ও মইয়ার হাওর সহ অন্যান্য হাওরের আগাম বোরো ফসল রক্ষায় ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ চলছে। গত কয়েক দিন সরেজমিনে হাওরে কমপক্ষে ২৫টি প্রকল্প ঘুরে কোথাও কোন অপ্রয়োজনীয় বাঁধ পাওয়া যায়নি। বরং কুবাজপুর ও আছিমপুর গ্রামের মধ্যস্থানে রাস্তা ভেঙে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙনে কাজ শুরু করতে অনেক বিলম্ব হয়েছে।