বেসরকারী মেডিকেলে শিক্ষা ব্যয় প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:০২:১৭ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘বেসরকারী মেডিকেলে শিক্ষা ব্যয় এক লাফে ৩ লাখ টাকা বৃদ্ধি শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কী সমন্বয় করতে বেসরকারী মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজের আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস এবং বিডিএস ভর্তি ফী ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত শুনতে হবে। শিক্ষা জীবন শেষ করতে খরচ হবে প্রায় সাফে ১৯ লাখ টাকা। হঠাৎ বৃদ্ধিতে নিম্ন মধ্যবিত্তদের চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ সংকুচিত হওয়ার শংকা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।
লক্ষণীয় যে, গত ১ ফেব্রুয়ারী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বেসরকারী মেডিকেল কলেজের এমডি যা বাড়ানোর বিষয়ে
সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বৈঠক হয়। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মালিক পক্ষ থেকে সব মিলিয়ে ভর্তি ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বৈঠকে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে ১৬ লাখ টাকা ধার্য করা হয়, যা বর্তমান ফীর চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশী। এতোদিন এই ফী ছিলো ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সচেতন মহলের মতে, কোন প্রকার নীতিমালা ছাড়াই হঠাৎ মেডিকেলে খা বৃদ্ধি মেডিকেল শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে সব শিক্ষার্থী বেসরকারী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাবে না। খরচ বাড়ায় বেসরকারীতে পড়া অধিকাংশই হবে ধনী শ্রেণীর সন্তান, কর্মজীবনে যারা প্রান্তিক অঞ্চলে সেবার দেয়ার মানসিকতা রাখবে না। অনেকের মতে, বেসরকারী মেডিকেলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের থেকে যে মুনাফা হয়, তাতেও অধিকাংশে চাহিদা পূরণ হওয়ার কথা।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে ডাকারী ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা সবচেয়ে জনপ্রিয়। এদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে এ দু’টি অন্যতম। বর্তমানে আইটি বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টির আগে এ দু’টিই ছিলো | এদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে সর্বমে পণ্য বিষয়। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফলকারী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাদের অধিকাংশেরই জবাব ছিলো, ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হতে চাই কিংবা আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশেষভাবে চিকিৎসক হওয়ার উচ্চাশা পূরণে বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলো বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। বেশী অর্থ ব্যয় হলেও আসন সংকট তথা তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ সরকারী মেডিকেলে ভর্তির বৈতরণী এড়িয়ে চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে | বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলো। এতে দেশে চিকিৎসক সংকট যেমন বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে, তেমনি ধনী শ্রেণীর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরাও চিকিৎসকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় আসার সুযোগ পাচ্ছে।
কিন্তু হঠাৎ করেই বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষা ব্যয় এতো বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি সীমিত আয়ের ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের মেডিকেল শিক্ষা তথা চিকিৎসা পেশায় একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের আশংকা দেখা দিয়েছে। নিচুরিও তো ঘটে এমনকি মধ্যবিত্তরাও এই শিক্ষা ও পেশা থেকে সম্পূর্ণ ছিটকে পড়তে পারে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের চিকিৎসক হওয়ার লালিত স্বপ্ন হতে পারে চিরতরে তিরোহিত। আর উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা চিকিৎসক হলে তাদের প্রায় সকলেই যে শহর ও নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি ও পেশাগত জীবন বেছে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা একজন চিকিৎসক স্বাভাবিকভাবেই সহানুভূতিশীল থাকবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পবিত্র রোগীদের প্রতি। তাদের অনেকেই গ্রামাঞ্চলে গিয়ে সেবাদানে কুষ্ঠিত হবে না।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বেসরকারী মেডিকেলে শিক্ষা ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে চিকিৎসার মতো সেবাধর্মী পেশাটি একটি বিশেষ শ্রেণীর মাঝে সীমাবদ্ধ ও সংকুচিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে, যা অধিকাংশ পবিত্র ও সীমিত আয়ের মানুষের দেশ বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো অশনি সংকেত। আমরা এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের | উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করি।