বাড়ছে অনলাইন জুয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:২২:৪৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : বাংলাদেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও ব্যক্তিগতভাবে দুজন বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার ফলাফল নিয়ে, বা অন্য কিছু নিয়ে ‘বাজি’ ধরে বিজয়ীকে অর্থ বা মূল্যবান বস্তু দেয়ার চল রয়েছে। আবার অনেক ক্লাব, অভিজাত এলাকা এমনকি ঘরের ভেতরে জুয়ার আসর বসার ঘটনাও নতুন নয়।
তবে এই জুয়া সাম্প্রতিক সময়ে ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন রূপ পেয়েছে। এ কারণে ঘরে বসেই মানুষ অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। এতে অনেক সময় তাদের কর্মকা- সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকছে না।
বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও এসব জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন যেমন বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা গেছে এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলোতেও প্রচার হতেও দেখা যাচ্ছে।
ইউটিউবে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক নাটকে এমনই একটি অনলাইন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার করায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক ইউটিউবার এবং তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। চব্বিশে ফেব্রুয়ারি তাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের সঙ্গে ভারতীয় এক জুয়ার এজেন্টের গত তিন বছর ধরে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, অভিযুক্তরা তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের এক ওয়েব সিরিজে নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। জুয়ার ব্যবসা প্রচারে বিজ্ঞাপনগুলো এখনও চলছে।
প্রতি পর্বে একেকটি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ওই ভারতীয় এজেন্টের থেকে অভিযুক্তরা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ। এখনও অনেক দেশে জুয়া খেলা আইনগতভাবে বৈধ হওয়ায় অনলাইনে এর ব্যাপ্তি ক্রমশ বাড়ছে।
ওয়ার্ল্ড গ্যাম্বলিং মার্কেট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে শুধুমাত্র অনলাইন জুয়ার বাজারমূল্য ছিল ৬৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে এর ব্যাপ্তি ১১.৭% বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবং এই অনলাইন জুয়ায় বাজারমূল্যের গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ এর সংবিধানে জুয়া খেলা নিরোধ করা হয়।
সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশের জুয়া প্রতিরোধে প্রচলিত আইনেও জুয়া খেলা অবৈধ। কিন্তু এ আইন ১৮৬৭ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং এতে সাজার পরিমাণও খুব নগণ্য।
পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট অনুযায়ী, যে কোনও ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে তার মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনও সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদ- বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডেদন্ডিত হতে পারেন।
এ রকম কোনও ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো সরঞ্জামসহ কোনও ব্যক্তিকে জুয়া খেলারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদ- বা ১০০ টাকা অর্থ- বা উভয় দন্ডেদন্ডিত হতে পারেন।
অর্থাৎ এই আইন শুধুমাত্র প্রকাশ্য জুয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং দ-বিধি বর্তমান বাস্তবতার সাথে উপযোগী নয় বলেই পুলিশের মত।
২০১৯ সালে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন জুয়ার আসর থেকে শতাধিক ব্যক্তি আটক হলে আইনের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তখন আলোচনায় আসে। তখন অবশ্য এই আইনে কোন মামলা দেয়া হয়নি।
তবে ১৫৬ বছরের পুরনো আইন সংশোধন করে একে যুগোপযোগী করা জরুরি বলে জানিয়েছে পুলিশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা।