সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিলীনের আশংকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৬:৪১:২৯ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় রেকর্ডিয় ফসলি জমি কেটে করা হচ্ছে নদী। অন্যদিকে নদীর পুরোনো গতিপথ ঘেঁষে করা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মনাই নদীর ভরাট হওয়া ১২ কিলোমিটার খননের সময় এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহু বছর আগে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত কংস নদী থেকে একটি খর¯্রাতো শাখা যাত্রাবাড়ির পাশে পূর্ব-উত্তর দিকে শুনই-কুষ্টিবাড়ির দিকে প্রবাহিত ছিলো। এই শাখা নদীর নাম মনাই নদী। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্টরা জানান, দুই আড়াইশ বছর আগে কয়েকটি ভূমিক¤েপ নদীটির প্রবাহ স্থবির হয়ে যায়। ওই সময় থেকেই নদীর পাড়ের মজলিশপুর দৌলতপুর রামদিঘার কাছে চর পড়ে যায়। পরে স্থানীয় জমিদার লিখিতভাবে এই জমিতে কৃষকদের অধিকার দেন। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২’র জরিপে চরপড়া জমিগুলি কৃষকদের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়। পরে ১৯৮৭ সালেও নদীর চরের জমিগুলি আরএস জরিপে যথারীতি কৃষকের নামে রেকর্ডভূক্ত হয়। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, মনাই নদী ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ, মধ্যনগর, চামরদানী ও জয়শ্রী এই চারটি ইউনিয়নে বিস্তৃত। এসব অঞ্চলের হাওরগুলির পানি নিষ্কাষণের কাজ করে এই নদী। পাঁচ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খননের পরিকল্পনা হাতে নেয়। খনন হলে এই নদী দিয়ে শুকনো মৌসুমেও অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সচল হবে। এছাড়া হাওরের পানি নিষ্কাষন ও খড়া মূহুর্তে নদী পার্শ¦বর্তী বোরো জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থাও হবে।
সরজমিনে দেখা যায়, নদীর একপাড়ে নবীনগর গ্রাম ও অপর দিকে মজলিসপুর গ্রাম। নবীনগর গ্রামের পাশ দিয়ে মনাই নদী প্রবাহিত হয়েছে। অপরপাড়ে কৃষকদের ফসলি জমি, এরপর মজলিসপুর গ্রাম। নবীনগরে পাশে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০ টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ঘরগুলো ঘেঁষেই খনন হচ্ছে মনাই নদী। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদীর ১২ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে। ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে পাশেই ফসলি জমিতে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বাসিন্দারা বলছেন, বাড়ির কিনার ঘেঁষে নদী খনন করায় বর্ষায় ঝুঁকিতে পড়বে ঘর। অপরপাড়ে কৃষকের ফসলি জমি কেটে নষ্ট করা হচ্ছে। নবীনগর গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের বাসিন্দা রোকিয়া বেগম বলেন, যেভাবে নদী খনন হচ্ছে ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হবে। সরকার ঘরই বা কেনো দিলো, এখন আবার ভেঙে দেবার ব্যবস্থাই কেনো করছে জানি না। আরেক বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন বলেন, আমার জমিজমা নেই। সরকার ছেলের নামে একটি ঘর দিয়েছে। সামনে টগার হাওর। পেছনে নদী। বর্ষায় হাওরের আফালের সঙ্গে লড়তে হয়। এখন বাড়ির পেছনে নদী খনন করা হচ্ছে। বাড়িঘর এখন আর রক্ষা করা যাবে না। মজলিসপুর গ্রামের বাসিন্দা বানিবালা বলেন, রেকর্ডিও ধানী জমি কেটে নদী খনন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের কিনার দিয়ে নদী বয়ে গেছে। এখন ঘর বাঁচাতে গিয়ে জমি খনন করে নদী করা হচ্ছে। যেদিকে নদী খনন হচ্ছে উপহারের ঘরও টিকবে না, ফসলি জমিও নষ্ট হলো। হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, নদী খননের মাটি জমিতে ফেলে কৃষকদের ধানী জমি নষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়াও নদী পাড়ের কৃষকদের ১০ থেকে ২০ ফুট জমি খনন করে নদীতে ঢুকানো হচ্ছে। এই দুটি বিষয়েই কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেবার দাবি আমাদের।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম ট্রেডার্সের সাইট ম্যানেজার নুরুল আলম মিটু বলেন, নদীর দু’পাশে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও কৃষকদের রেকর্ডিও ফসলি জমি বাঁচাতে গেলে নদীর গতিপথই পাওয়া যায় না। তবে কারও যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য স্থানীয়দের সহযোগিতায় নদী খনন করা হচ্ছে। মাটিও সরিয়ে দেওয়া হবে। অভিযোগ পেয়ে সরজমিনে গিয়ে নদীর জায়গা চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, যারা খননের কাজ করেছেন, তাদের বলা হয়েছে নির্ধারিত জায়গায় নদী খনন করতে। নদীর কিনার ঘেঁষে ঘর নির্মাণ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে এটি ধর্মপাশা উপজেলা থেকে করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীতেশ চন্দ্র সরকার বললেন, আমি নতুন এসেছি, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।