চায়ের দেশে বরইয়ে স্বপ্ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৮:১০:৩১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: চায়ের দেশ হিসেবে পরিচিত সিলেট বিভাগরে মৌলভীবাজার। চা আর লেবুর জন্য এই জনপদের শ্রীমঙ্গরের নাম দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে। সেই চা আর লেবুর রাজ্যে বরই নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন এক উদ্যোক্তা। আজাদুর রহমান নামে এই স্বপ্নচারী মানুষের বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে। এই বরই থেকে তিনি বছরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। তার বরই চাষের খবর ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর। সিলেট ছাড়াও ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বরই বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। বরই চাষে আজাদের সাফল্য দেখে এলাকার অনেক যুবক এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তারা জানায়, আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য অনুকূলে থাকায় মৌলভীবাজারে চলতি মৌসুমে সুস্বাদু ও মিষ্টি বরই আবাদ হয়েছে। আজাদের বাগানে ভালো বরই চাষ হওয়ায় অনেক জায়গায় তার সুনাম ছড়িয়েছে। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন বরই চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
বরই চাষ করে এলাকার মডেল হলেন আজাদুর রহমান। তার বাগানে আছে সুস্বাদু কাশ্মীরি আপেল কুল, বাউকুল, জাম্বুকুল এবং ঢাকা-৯০ কুল। এলাকার চাহিদা পূরণের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে সরবরাহ হচ্ছে এ বরই।
শুরুটা ২০০১ সালে। ১০ একর জমিতে ঈগল নার্সারি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আজাদ। এখানে পর্যায়ক্রমে কাশ্মীরি আপেল কুলসহ বিভিন্ন জাতের বরই চাষ শুরু করেন। কুমিল্লা ও যশোর থেকে চারা আনেন। প্রায় চার ফুট লম্বা আকারের লাগানো গাছে এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। এখান থেকে তিনি প্রতি বছর ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ৫ লাখ টাকা আয় করেন। তার সফলতা দেখে এলাকার লোকজন অবাক হয়ে যান। চলতি মৌসুমে আজাদুর রহমান ঢাকা-৯০ জাতের বরই চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন।
সম্প্রতি দেখা যায় বাগানের প্রতিটি গাছে ঢাকা-৯০ কুলে ছেয়ে আছে। ফলের ভারে গাছসহ ডালগুলো নিচের দিকে নুয়ে পড়েছে। ৫-৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বাঁশের খুঁটি দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে প্রতিটি গাছ। পাখির হাত থেকে বরই রায় পুরো বাগান জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
বাগান মালিক আজাদুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বাগান থেকে ৪-৫ লাখ টাকা আয় হয়। অল্প দিনে বরই চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। বিক্রির পাশাপাশি কলম চারা তৈরি করছি। বিভিন্ন ফল-ফুলের চারাও বিক্রি করি। কাশ্মীরি আপেল কুল, বাউকুল, জাম্বুকুল বিক্রি প্রায় শেষ। এ মৌসুমে টক-মিষ্টি সমৃদ্ধ রসালো ঢাকা-৯০ জাতের বরই প্রতি কেজি ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫০-২০০ কেজি বরই বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ বলেন, জেলায় ৬৫৪ হেক্টর জমিতে বরই আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ও মাটির গুণাবলি ভালো থাকায় বরইর ফলন ভালো হয়েছে। শমশেরনগরে আজাদুর রহমানের বাগানের বরইগুলো খুবই সুস্বাদু এবং মিষ্টি। তার বাগান দেখে অনেক বেকার যুবক বরই বাগান করতে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগের প থেকে বাগান মালিকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।