নির্মাণ উপকরণের দাম পুনঃনির্ধারণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৯:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারের বাড়তি খরচ সমন্বয় করতে ইট, বিটুমিন, সিমেন্ট, রডসহ নির্মাণ উপকরণগুলোর দাম পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত রোববার এসব উপকরণের দর পুনঃনির্ধারণ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে লোকসানের আশঙ্কায় ঠিকাদাররা কাজ কমিয়ে দিলে থমকে যায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখতে বাজারদর অনুযায়ী নতুন রেট শিডিউলের দাবি করে আসছিলেন ঠিকাদাররা। ফলে শেষ পর্যন্ত জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ উপকরণগুলোর শিডিউল অব রেট পুনঃনির্ধারণ করা হলো।
প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রধান নির্মাণ উপকরণ বিটুমিনের দাম ৪২ শতাংশ, সিমেন্টের দাম ২২ শতাংশ ও রডের দাম ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং ইটের দাম মানভেদে ৩০ শতাংশ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রথম শ্রেণির অধিক পোড়া বা ঝামা ইটের দাম ১০ টাকা থেকে ৩ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকায়। আর অটোমেটিক মেশিনে তৈরি ১ নম্বর গ্রেডের ইটের দাম ১১ দশমিক ৫ টাকা থেকে ৪ দশমিক ৫ টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ টাকায়। দাম বাড়িয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নির্মাণকাজের শিডিউল অব রেট পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় চলমান প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রকল্পের ব্যয় ধরা আছে ১ হাজার ৭৬২ লাখ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ২ দশমিক ৪৭ লাখ কোটি টাকা থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ২ দশমিক ২৮ লাখ কোটি টাকায়। সরকারের উন্নয়নকাজের ৮০ শতাংশের বেশি নির্মাণধর্মী হওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের সব দপ্তরের দর তপশিলের জন্য নতুন এ দাম কার্যকর হবে। এরই মধ্যে অনুমোদন হয়েছে, এমন কাজগুলোর মোট ব্যয়ের তথ্য উপকরণগুলোর নতুন দামের ভিত্তিতে পুনর্র্নিধারণ করে তা জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে প্রতিটি প্রথম শ্রেণির ঝামা ইটের দাম ধরা হয়েছে ১৩ টাকা। বর্তমানের শিডিউল অব রেটে এ ইটের দাম ধরা আছে ১০ টাকা। এ হিসাবে ঝামা ইটের দাম বাড়ছে প্রতিটি ৩ টাকা বা ৩০ শতাংশ। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ঝামা ইটের দাম ৯ দশমিক ৬ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১২ দশমিক ৫ টাকায়। আর খুলনা ও বরিশালে ৯ দশমিক ৮ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১২ দশমিক ৫ টাকায়। এ হিসাবে রাজশাহী ও রংপুরে ঝামা ইটের দাম প্রতিটি ২ দশমিক ৯ টাকা এবং খুলনা ও বরিশালে ২ দশমিক ৭ টাকা করে বাড়ছে। সারা দেশেই স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি প্রথম শ্রেণির ইটের দাম ৪ দশমিক ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ১১ দশমিক ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে এ ইটের ব্যয় দেখানো হবে ১৬ টাকা। এ হিসাবে দাম বৃদ্ধির হার ৩৯ শতাংশ।
প্রতি কেজি বিটুমিনের (গ্রেড ৬০/৭০) খুচরা পর্যায়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে দাম বেড়েছে ২৩ টাকা। বিদ্যমান রেট শিডিউলে উপকরণটির দাম ৬৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯২ টাকায়। শতকরা হিসাবে দাম বাড়ছে ৩৩ ভাগ। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ৩২ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় ৩৪ শতাংশ করে বাড়ছে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিনের খুচরা দাম। একই গ্রেডের বিটুমিনের বাল্ক দাম ঢাকা ও ময়মনসিংহে ৪১ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাল্ক সংগ্রহে প্রতি কেজি ৬৩ টাকা থেকে বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৮৯ টাকায়। চট্টগ্রাম ও সিলেটে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিনের পাইকারি দাম ৩৮ শতাংশ হারে বাড়লেও দেশের অন্য চার বিভাগে বাড়ছে ৪২ শতাংশ করে। একই ভাবে খুচরা এবং বাল্ক সংগ্রহে অন্যান্য গ্রেডের বিটুমিনের দামও সারা দেশেই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রতি বস্তা অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের দাম খুচরা পর্যায়ে ৭০ টাকা ও বাল্ক সংগ্রহে ৮০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৪৯০ টাকা থেকে ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে খুচরা সিমেন্টের দাম ধরা হয়েছে ৫৬০ টাকা। আর ৪৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে বাল্ক সংগ্রহে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ধরা হয়েছে ৫২০ টাকা। এ হিসাবে পাইকারি সিমেন্টের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। প্রতি বস্তা পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্টের খুচরা দাম ৪৬০ টাকা থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৫ টাকায়। এ হিসাবে বস্তায় দাম বেড়েছে ৬৫ টাকা। আর বাল্ক সংগ্রহে একই মানের সিমেন্টের দাম ৪১০ টাকা থেকে ২২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকায়। শতকরা হিসাবে দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ।