অপ-সংস্কৃতির খপ্পরে পোষ্য, উদাসীন অভিভাবক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০১:১৫ অপরাহ্ন
অপ-সংস্কৃতির খপ্পরে পোষ্য, উদাসীন অভিভাবক
কয়েস আহমদ
সম্প্রতি কানাডায় বাংলাদেশী তিন যুবক এবং এক যুবতীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে দেশে বিদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এতে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের পিতা মাতাদের বুক খালি হয়েছে শুধু নয়, বরং তারাই জানেন তাদের হৃদয়ে কি ভাবে রক্ত ঝরছে।
প্রবাসে আমার কয়েক দশক হয়ে গেছে এবং এসব দিনগুলিতে বাংলাদেশি সন্তানদের যা শুনে আসছি কিংবা নিজের চোখে যা দেখেছি অথবা অনুভব করেছি তা রীতিমত পীড়াদায়ক। এসব দেশের সামাজিক রীতি হচ্ছে কোন কিশোর কিশোরীর একা থাকতে কিংবা চলাফেরা করতে নাই। প্রত্যেকে একেকজন ছেলে বন্ধু কিংবা মেয়ে বন্ধু নিয়ে চলাফেরা করা কর্তব্য। যাদের এসব নাই তারা সমাজের আবর্জনা। এমনি পরিবেশে এসে আমাদের দেশের ধার্মিক পরিবারের যুবক/যুবতীরা এই বয়সে নিজেদের ঠিক রাখা মুশকিল। ইংল্যান্ড কিংবা যে সব দেশে বাংলাদেশীরা সংখ্যাগরিষ্ট সেখানে বয়স্কদের চোখে পড়ার ভয়ে একটু গোপনে আমাদের যুবক/যুবতিরা তাদের খেলা খেলে। শুনেছি সেখানে বাংলাদেশী মেয়েরাও আজকাল পার্কে মাদক সেবন করে ঘুরে বেড়ায়।
কানাডার প্রসঙ্গে আসি। বিগত কয়েক বছরে এসব অসামাজিক কাজ থেকে আমাদের উদীয়মান তরুণদের আলোর পথে ডাকতে আমরা এখানে ‘শনি-রবিবারের ইসলামী স্কুল’ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও অন্যান্য অনেক প্রচেষ্টা করেছি। তবে আজকাল যে হারে স্টুডেন্ট ভিসাতে প্রচুর তরুণ তরুণী এদেশে আসছে তাদের নিজস্ব অভিভাবক ব্যতিরেকে কমিউনিটির বয়স্ক ব্যক্তিরা খেয়াল রাখা কঠিন।
নতুনরা আমাদের ‘থোড়াটাই কেয়ার করে’ থাকে। সেজন্য আমাদের ভয় হয় ওদের সামলাতে। এ ব্যাপারে আমার বেশ কিছু দুঃখজনক অভিজ্ঞতা রয়েছে- যা লজ্জায় লিখতে সাহস করছি না।
গত সপ্তাহে যে তিন তরুণ মেয়ে বান্ধবীকে নিয়ে গভীর রাতে বেড়াতে যেয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা গেলো তাতে কি পিতামাতা বা অন্যান্য অভিভাবক খোঁজ নিয়েছেন এত রাতে হিম ঠান্ডায় তারা কোথায় যাচ্ছিল? দেশে কি এভাবে তিন ছেলে এক মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে গভীর রাতে ঘুরতে সাহস পাবে ?
আজকাল হয়তো পাবে কিন্তু আগে তা ছিল না। সিলেট অঞ্চলে আমার জন্ম। ওই এলাকার লোকজন অন্য এলাকার চেয়ে অনেকটা রক্ষণশীল ছিল আমাদের আমলে। আজকাল অনেকে কিশোরী মেয়েদেরে তাদের ইচ্ছামত পাঠিয়ে দিচ্ছেন লিখা পড়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যেখানে পাঠাচ্ছেন সে দেশের চলাফেরার খবর কি তারা জানেন না। যদি কিছুটাও জেনে থাকেন তবে কোন সাহসে জ্বলন্ত আগুনে আদরের সন্তানদের পাঠালেন তা হয়তো তারাই ভাল বলতে পারবেন।
আমাদের স্টুডেন্ট ভিসাতে আগত মেয়েদের একজনকে খেয়াল রাখতে গিয়ে আমি হতাশ হয়ে গেছি। প্রত্যেক শনি-রবিবার তারা অন্য বান্ধবীদের ডাকে বেড়াতে যায়। তখন ফোন করলে জানায় আমরা মসজিদে একটা অনুষ্ঠানে আছি। এভাবে এক সাথীর কাছ থেকে অন্যজন মিথ্যা বলার ট্রেনিং নেয়।
লেখক :টরেন্টো প্রবাসী