সীমান্ত দিয়ে আসছে আগ্নেয়াস্ত্র : সিলেটসহ ৩২ জেলায় হবে ‘ব্লক রেইড’
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৩, ৯:১৫:২৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত জেলায় হঠাৎ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা। কেউ কেউ ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করেও চালাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে।
বিশেষ শাখার (এসবি) তৈরি করা প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশে ১৫০টি গুলির ঘটনা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন গড়ে গুলিবিদ্ধ হচ্ছে ৫ জনেরও বেশি।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ সূত্র বলছে, বিভিন্ন সংঘর্ষে যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে, এর বেশিরভাগই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ। ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এসব সংঘর্ষ হচ্ছে। পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কোথায় কোথায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে বা আশঙ্কা রয়েছে, সেই তালিকা করা হয়েছে। এসপিদের এ বিষয়ে অবগত করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। এ অবস্থায় এখনই লাগাম টানতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এজন্য সীমান্তবর্তী সিলেটসহ দেশের ৩২টি জেলায় ‘বøক রেইড’ দেওয়া হবে। এরপর সারাদেশে শুরু হবে সাঁড়াশি অভিযান। এসব অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি ইউনিট অংশ নিবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি জেলার ওপর থাকবে বিশেষ নজর। রাজনৈতিক সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বা আশঙ্কা রয়েছে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে জেলাগুলো নির্ধারণ করেছেন গোয়েন্দারা। রাজনৈতিক উত্তাপ-অস্থিরতা ছড়ানোর আগেই টানা অভিযান চালিয়ে লাগাম টানতে চায় সরকার। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. হায়দার আলী খান গণমাধ্যমকে বলেন, অস্ত্র উদ্ধার পুলিশের রুটিন কাজ। এই অভিযান সব সময়ই চলমান। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আরেকটা সাঁড়াশি অভিযান চলানোর নির্দেশনা রয়েছে। সেটার প্রস্তুতি চলছে।
কিভাবে ঢুকছে অস্ত্র : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রগুলো বলছে, সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ ও নাইন এমএম পিস্তল বেশি ঢুকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। আর পয়েন্ট টু-টু বোরের রিভলবার আসছে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত ব্যবহার করে। কুমিল্লা, যশোরের বেনাপোল ও হিলি সীমান্ত হয়েও নানা ধরনের অস্ত্র ঢুকছে দেশে।
সীমান্তে চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের অনুপ্রবেশ যে হচ্ছে, তা অস্বীকার করছে না বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের ৩২৮ কিলোমিটার স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোরের শার্শা, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, হিলি, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান অন্যতম। তথ্য বলছে, এই সীমান্তগুলোর অন্তত ৩২ পয়েন্ট দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র ঢুকে।
যে ২০ জেলায় অভিযান : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিসংখ্যান বলছে, ছোট ছোট আগ্নেয়াস্ত্র সীমান্ত দিয়েই দেশে ঢুকছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, পেশাদার, গুপ্ত খুনি ও রাজনীতির নাম ব্যবহার করা সন্ত্রাসীদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্র। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তবর্তী ৩২ জেলায় বøক রেইড দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এসব সীমান্ত জেলার মধ্যে ভারতের সঙ্গে ৩০টি এবং মিয়ানমার সীমান্তে রয়েছে দুটি জেলা।
বিশেষ করে সিলেট, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাগুরা ও বরগুনা এই ২০ জেলায় থাকবে কঠোর নজরদারি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে প্রতি মাসে অস্ত্রবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
বিজিবি পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি মুহূর্তে সীমান্তে বিজিবি’র ৬ হাজার সদস্য টহলে থাকে। এর মধ্যেও অস্ত্র আসছে। আমরা অস্ত্র কারবারিদের নেটওয়ার্ক ভাঙার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে।